Home Third Lead ইপিজেড-বিমানবন্দর সড়ক এখন ভোগান্তির প্রতীক

ইপিজেড-বিমানবন্দর সড়ক এখন ভোগান্তির প্রতীক

চট্টগ্রামে প্রতিদিন দুর্ভোগে লাখো শ্রমিক, ব্যবসায়ী ও পথচারী

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: নগরীর ইপিজেড-বিমানবন্দর সড়ক একসময় ছিল শিল্পাঞ্চলের গর্ব, অর্থনীতির রক্তপ্রবাহের অন্যতম পথ। কিন্তু এখন তা রূপ নিয়েছে চরম দুর্ভোগের রাস্তায়। বৃষ্টির দিনে সড়কজুড়ে পানি, আর শুকনো দিনে ধুলাবালিতে আচ্ছন্ন পথ-দুই অবস্থায়ই বিপাকে পড়ছেন এই পথ দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াতকারী লাখো মানুষ।

শ্রমিক থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী, রোগী, এমনকি পণ্যবাহী গাড়ির চালকরাও এই দুরবস্থার শিকার। অথচ এই সড়কই চট্টগ্রামের রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড), সি ইপিজেড, কে ইপিজেড, বিমানবন্দর, নেভাল ও পতেঙ্গা সী-বিচের সঙ্গে নগরের একমাত্র সরাসরি সংযোগ।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণে বাড়ছে দুর্ভোগ

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নগরের চলমান এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের জন্য ইপিজেড-বিমানবন্দর সড়কের বিভিন্ন অংশে খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়েছে। নির্মাণের পর রাস্তার পিচের স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সঠিকভাবে সংস্কার করা হয়নি। ভারী যানবাহন প্রতিদিন এই দুর্বল রাস্তার ওপর দিয়ে চলায় গর্ত আরও বড় ও গভীর হয়েছে। বৃষ্টির পানিতে এসব গর্ত ঢাকা পড়ে গিয়ে সৃষ্টি করছে প্রাণঘাতী ফাঁদ।

শ্রমিকদের প্রতিদিনের দুঃসহ যাত্রা

ইপিজেড এলাকার একটি গার্মেন্টস কারখানায় কাজ করেন ফাতেমা বেগম। প্রতিদিন ভোরে সীতাকুণ্ড থেকে রওনা হন। তিনি বলেন,
“রাস্তার গর্ত আর কাদার জন্য আমাদের চলাফেরা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। একেকদিন এত বেশি পানি জমে যে পা ডুবিয়ে হেঁটে অফিসে যেতে হয়। অনেকদিনেই গার্মেন্টে পৌঁছাতে দেরি হয়, সেজন্য বেতন থেকে কেটে নেয়।”

আরেক শ্রমিক তৌহিদুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,
“এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ চলাচল করে, অথচ দেখার কেউ নেই। ফ্লাইওভারের কাজ যে কত বছর চলছে জানি না। দিনের পর দিন রাস্তার দুইপাশে খোঁড়া, মাঝখানে কাদা আর ধুলো। ফুটপাত বলতেও কিছু নেই। হকারদের দখলে সব। শ্রমিকদের যে কত কষ্ট হয়, সেটা কেবল তারাই জানেন।”

এছাড়া এক নারী শ্রমিক, শারমিন আক্তার জানান,
“বৃষ্টির দিনে কাদা-পানিতে কাপড় ভিজে যায়। কখনও কখনও পড়ে গিয়ে আহত হয়েও যেতে হয়। অথচ নারী শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ চলাচলের কোনো ব্যবস্থাই নেই। আমরা মানুষ না?”

ব্যবসায়িক ক্ষতির মুখে উদ্যোক্তারা

সড়কটির এই বেহাল দশা শুধু শ্রমিকদের জন্য নয়, বড় ক্ষতির মুখে ফেলেছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও। বিশেষ করে যেসব প্রতিষ্ঠান কাঁচামাল আনা-নেওয়া করে এই সড়ক ব্যবহার করে, তাদের পরিবহন খরচ ও সময় কয়েকগুণ বেড়ে গেছে।

ইপিজেড সংলগ্ন একটি গার্মেন্টস মালিক মো. কামাল উদ্দিন বলেন,
“প্রতি সপ্তাহেই আমাদের ট্রাকে পণ্য সময়মতো কারখানায় পৌঁছায় না। যানজটে বসে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এতে যেমন উৎপাদনে দেরি হয়, তেমনি বিদেশি ক্রেতাদের কাছেও আমাদের সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়।”

ট্রাকচালক আব্দুর রহিম বলেন,
“এই রাস্তায় রাতে চলতে ভয় লাগে। গর্তে পড়ে গাড়ির সাসপেনশন ভেঙে যায়, অনেকে গাড়ি আটকে পড়ে থাকে। আবার একদিকে পানি, অন্যদিকে হকার—কোথা দিয়ে গাড়ি চালাব?”

প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি, বাস্তবতায় ধীরগতি

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের এক নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন,
“ইপিজেড-বিমানবন্দর সড়ক সংস্কারের জন্য ইতোমধ্যে প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। বর্ষা শেষ হলে পুরোদমে কাজ শুরু হবে। পাশাপাশি ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়নের কাজও হাতে নেওয়া হয়েছে।”

তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও বাস্তবে কাজের অগ্রগতি নেই বললেই চলে। বরং সংস্কার বিলম্বিত হওয়ায় প্রতিদিন ভোগান্তি আরও বাড়ছে।

চূড়ান্ত প্রশ্ন: নগরবাসীর কষ্ট কতদিন?

চট্টগ্রামের প্রাণকেন্দ্রের একটি প্রধান সড়ক বছরের পর বছর এভাবে ধুঁকে পড়ে থাকলে, নগর ব্যবস্থাপনায় বড় প্রশ্ন থেকেই যায়। উন্নয়নের নামে চলা নির্মাণ কাজ যদি জনভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তবে সেই উন্নয়নের প্রকৃত মূল্যায়ন কিভাবে হবে?

এই রাস্তায় চলাচলকারী প্রায় ১৫ থেকে ২০ লাখ মানুষের প্রতিদিনের দুর্ভোগ কি শুধু রিপোর্টে বা সভায় সীমাবদ্ধ থাকবে? নাকি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবার বাস্তব পদক্ষেপ নেবে?

  • আপনার এলাকায় এমন সড়ক, সেবা বা সমস্যার কথা আমাদের জানান। প্রতিবেদনটি শেয়ার করুন, মতামত দিন। জনদুর্ভোগ লাঘবে সচেতন হোক কর্তৃপক্ষ।