Home আন্তর্জাতিক ইরান-ইসরাইল যুদ্ধ: যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ারি, বিশ্ব কূটনীতিতে বিভাজন

ইরান-ইসরাইল যুদ্ধ: যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ারি, বিশ্ব কূটনীতিতে বিভাজন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি স্পষ্ট ভাষায় হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে যদি যুক্তরাষ্ট্র এ যুদ্ধে সম্পৃক্ত হয়, তবে তার পরিণতি হবে ‘ভয়াবহ’। এই বক্তব্য শুধু ওয়াশিংটনের প্রতি বার্তাই নয়, বিশ্ব রাজনীতিতে ইরানের নতুন প্রত্যয়েরও ইঙ্গিত।

ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে সংঘর্ষ দিনদিন আরও জটিল আকার নিচ্ছে। একদিকে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চলছে, অন্যদিকে কূটনীতির টেবিলে চরম টানাপোড়েন। ইরান তার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম শূন্যে নামাতে নারাজ, যদিও আন্তর্জাতিক চাপ রয়েছে। এ অবস্থায় ইরানকে পূর্বের তুলনায় আরও কঠোর এবং প্রস্তুত প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখছে বিশ্লেষকরা।

এদিকে, ইরান প্রশ্নে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে জাতীয় গোয়েন্দা প্রধান তুলসি গ্যাবার্ডের দ্বন্দ্ব সামনে এসেছে। কংগ্রেসে গ্যাবার্ড বলেছিলেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে না। ট্রাম্প এই বক্তব্যকে ‘ভুল’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। পরে গ্যাবার্ড নিজের অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসে বলছেন, ইরান কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই অস্ত্র তৈরি করতে পারে।

ইতোমধ্যে ইসরাইলের হামলায় নিহত হয়েছে অন্তত ৪৩০ জন ইরানি, আর ইরান পাল্টা হামলায় ইসরাইলি এলাকায় ঘটেছে বিস্ফোরণ, অগ্নিকাণ্ড ও প্রাণহানি। ইরান দাবি করেছে, ইসরাইলি ভূখণ্ডে তাদের ড্রোন সফলভাবে আঘাত হেনেছে। আইডিএফ জানিয়েছে, ইরানের দুজন শীর্ষ কমান্ডারকে হত্যা করা হয়েছে।

এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই আঞ্চলিক কূটনীতির ময়দানে সক্রিয় হয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান। ইস্তান্বুলে তিনি আরাঘচির সঙ্গে বৈঠকে বলেন, ইসরাইলই শান্তি প্রক্রিয়ার সবচেয়ে বড় বাধা। এরদোগান এই সংঘর্ষকে ‘সমঝোতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র’ বলেও উল্লেখ করেন।

তবে আলোচনার সম্ভাবনা এখনও একেবারে নাকচ হয়নি। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রন জানিয়েছেন, ইরান কখনোই পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী হবে না তা নিয়ে তিনি তেহরানের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইউরোপ চায় শান্তিপূর্ণ সমঝোতা, যদিও ইরান বলেছে, ইসরাইলি হামলা বন্ধ না হলে কোনো আলোচনায় তারা যাবে না।

আন্তর্জাতিক পরমাণু সংস্থা (আইএইএ) সতর্ক করেছে, ইরানে ইসরাইলি হামলার পর তেজস্ক্রিয়তার ঝুঁকি বাড়ছে। তবে তাত্ক্ষণিক প্রভাব এখনও সীমিত।

এদিকে, চীন ও রাশিয়া নিজেদের ‘শান্তির দূত’ হিসেবে তুলে ধরছে। শি জিনপিং ও পুতিন এক ফোনালাপে এই সংঘাতকে ‘নির্বোধ আগ্রাসন’ আখ্যা দিয়ে ইসরাইলের সমালোচনা করেছেন। তারা যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বর্তমান বিশ্বব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, চীন-রাশিয়ার এই কৌশল একদিকে যেমন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করছে, তেমনি ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর চোখে তাদের জন্য কূটনৈতিক জয় বয়ে আনতে পারে। চীন ইতিমধ্যেই চার দফা শান্তি প্রস্তাব দিয়েছে, কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি বলছে—এই সংঘর্ষের সমাপ্তি এখনও অনেক দূরে।