Home Second Lead উৎপাদনে শীর্ষে বাংলাদেশ, তবু সাধারণ মানুষের পাতে নেই ইলিশ

উৎপাদনে শীর্ষে বাংলাদেশ, তবু সাধারণ মানুষের পাতে নেই ইলিশ

আমিরুল মোমেনিন:

ঢাকা: ইলিশের প্রাচুর্যের বাংলাদেশে ভরা মৌসুমেও বাজারে মাছের রাজা যেন নাগালের বাইরে। দাম এতটাই আকাশছোঁয়া যে সাধারণ মানুষের কাছে ইলিশ এখন বিলাসদ্রব্যে পরিণত হয়েছে। রাজধানীসহ দেশের প্রায় সব বাজারেই ১২০০ টাকার নিচে কোনো ইলিশ নেই। এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে আড়াই হাজার টাকা বা তারও বেশি দামে। ফলে ইলিশের স্বাদ নেওয়ার সাধ থাকলেও সাধ্য নেই সাধারণ ভোক্তার।

জেলেরা বলছেন, সাগরে ইলিশের উৎপাদন ভালো হলেও জালে ধরা পড়ছে তুলনামূলক কম। এর মধ্যে বড় ইলিশের সংখ্যা একেবারেই কম। তাই সরবরাহ কমে বাজারে দামের লাগাম টানা যাচ্ছে না। বিক্রেতা ও ক্রেতারা একবাক্যে স্বীকার করছেন, এবারের মতো অতীতেও কখনো এত বেশি দাম দেখা যায়নি।

বাজার নিয়ন্ত্রণে সারা দেশে ইলিশের যুক্তিসঙ্গত দাম নির্ধারণের জন্য প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে নির্দেশনা দেওয়া হলেও দেড় মাসেও কার্যকর হয়নি। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, মধ্যস্বত্বভোগী ও সিন্ডিকেটের কারসাজিতেই বাজার অস্থির। মৎস্য কর্মকর্তাদের মতে, ইলিশ ধরা নির্ভর করছে অমাবস্যা-পূর্ণিমা ও বৃষ্টির ওপর। আগামী ভাদ্র-আশ্বিন মাসে সরবরাহ বাড়বে এবং দাম কিছুটা কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ভোক্তারা বলছেন, আয়-রোজগার কমে যাওয়ার পাশাপাশি অস্বাভাবিক দামে ইলিশ কেনা দুঃস্বপ্নের মতো। রাজধানীর মালিবাগ বাজারের ক্রেতা দীপক হালদার বলেন, “যত টাকাই থাকুক না কেন, তিন হাজার টাকা দিয়ে একটি ইলিশ কেনা সম্ভব নয়।”

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইলিশের প্রকৃত আহরণ খরচ তুলনামূলক কম হলেও অসাধু ব্যবসায়ী ও দাদনদারদের কারণে বাজার বেসামাল হয়ে পড়েছে। কনজুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) জানিয়েছে, উৎপাদন কিছুটা কমলেও দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। এ অবস্থা নিয়ন্ত্রণে না আনলে ভোক্তারা আরো চাপে পড়বেন।

 পাইকারি বাজারে এক কেজির ইলিশের দাম পড়ছে দুই হাজার টাকার ওপরে। ঢাকায় পৌঁছালে সেই মাছ বিক্রি হচ্ছে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকায়। খুচরা বাজারে ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ কিনতেও গুনতে হচ্ছে ১২ থেকে ১৪শ টাকা। জুলাই মাসে বড় ইলিশের দাম ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত উঠেছিল।

অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গে ইলিশ তুলনামূলক সস্তা। কলকাতার বাজারে আধা কেজি ইলিশ ৬০০ থেকে ৭৫০ রুপিতে (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ হাজার ৫০ টাকা) বিক্রি হচ্ছে। এক কেজির ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে দেড় হাজার থেকে ১ হাজার ৮০০ রুপি দামে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা। ফলে প্রতিবেশী দেশে দাম অনেকটা কম হলেও বাংলাদেশের বাজারে সাধারণ মানুষের জন্য ইলিশ এখন বিলাসিতা।

বিশ্বের মোট ইলিশ উৎপাদনের ৮৬ শতাংশই হয় বাংলাদেশে। দেশের জিডিপিতে এর অবদান প্রায় এক শতাংশ এবং মোট মৎস্য উৎপাদনে ১২ শতাংশ। সরকার বলছে, সঠিকভাবে নিষেধাজ্ঞা ও সংরক্ষণ কার্যক্রম মানা গেলে উৎপাদন বাড়তে থাকবে। গত অর্থবছরে ইলিশ উৎপাদন হয়েছে ৫ লাখ ২৯ হাজার মেট্রিক টন। চলতি বছর তা পৌনে ৬ লাখ মেট্রিক টনে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

কিন্তু উৎপাদনে শীর্ষ অবস্থানে থেকেও ভোক্তাদের নাগালে নেই ইলিশ। দাম নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা কার্যকর না হওয়ায় প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে—বাংলাদেশে ইলিশ কি তবে চিরকালই বিলাসদ্রব্য হয়ে যাবে?