Home অন্যান্য ইলেক্ট্রিক বিল রিডিউসার: বিভ্রান্তিকর প্রচারণা নাকি প্রতারণা?

ইলেক্ট্রিক বিল রিডিউসার: বিভ্রান্তিকর প্রচারণা নাকি প্রতারণা?

বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন সব বিজ্ঞাপন চোখে পড়ছে, যেখানে দাবি করা হচ্ছে একটি ছোট ডিভাইসই নাকি ৫০ থেকে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিল কমিয়ে দিতে পারে। এসব ডিভাইসকে বলা হচ্ছে “ইলেক্ট্রিক বিল রিডিউসার” বা “পাওয়ার সেভার বক্স”। অল্প মূল্যে পাওয়া এসব পণ্যের প্রতি সাধারণ গ্রাহকদের আগ্রহও বাড়ছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এটা আসলেই কি কাজ করে?

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের ডিভাইস বাস্তবে কোনো কার্যকরী ফল দেয় না। বিদ্যুৎ প্রকৌশলীরা বলছেন, এসব যন্ত্র সাধারণত একটি ছোট ক্যাপাসিটর আর একটি এলইডি লাইট দিয়ে তৈরি। এতে কোনো সক্রিয় প্রযুক্তি নেই যা বাসা-বাড়ির বিদ্যুৎ খরচ কমাতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজ, স্নোপস ও সায়েন্স ফিডব্যাক একাধিক ফ্যাক্টচেক রিপোর্টে বলেছে—‘StopWatt’, ‘MiracleWatt’, ‘Pro Power Save’-এর মতো ডিভাইসগুলো শুধুই প্রতারণামূলক। কিছু বিজ্ঞাপনে দেখা যায়, ইলন মাস্ক বা লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিওর ছবি দিয়ে প্রচারণা চালানো হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।

যুক্তরাজ্যের ‘Electrical Safety First’ সংস্থা এসব ডিভাইসের নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কারণ এগুলো অনেক সময় বিদ্যুৎ লাইনে সমস্যা তৈরি করতে পারে বা শর্ট সার্কিটের আশঙ্কাও থাকে।

বাস্তবতা হলো, বাসাবাড়ির বিদ্যুৎ বিল নির্ভর করে ‘রিয়েল পাওয়ার’-এর ওপর, আর এসব ডিভাইস যেটি ঠিক করার দাবি করে ‘রিএকটিভ পাওয়ার’ তা সাধারণত গৃহস্থালির ক্ষেত্রে বিলের অংশ নয়। এই ‘পাওয়ার ফ্যাক্টর কারেকশন’ মূলত শিল্প প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত হয়, যেখানে বিদ্যুতের ভারসাম্য গুরুত্বপূর্ণ।

এছাড়া অনেক ডিভাইস বিক্রি করা হচ্ছে নামসর্বস্ব ওয়েবসাইটে, যেখানে গ্রাহকদের ব্যক্তিগত তথ্য নেওয়ার পর পণ্য না পাঠানোর ঘটনাও ঘটছে।

  • বিদ্যুৎ বিল কমাতে প্রকৃত যেসব উপায় রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো:
    – ইনভার্টার প্রযুক্তিসম্পন্ন যন্ত্রপাতি ব্যবহার
    – এলইডি লাইটিং
    – প্রয়োজনবিহীন যন্ত্র বন্ধ রাখা
    – দিনের বেলা সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার
    – বিদ্যুৎ ব্যবহার বিশ্লেষণে ‘এনার্জি অডিট’

প্রযুক্তি ব্যবহারে সচেতন না হলে এই ধরনের বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপন মানুষকে আর্থিক ক্ষতির মুখে ফেলতে পারে। তাই “অলৌকিক সমাধান” দাবি করা ডিভাইসের পেছনে না ছুটে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে শক্তি সাশ্রয়ে মনোযোগ দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।