Home আন্তর্জাতিক ইরানে ইসরায়েলি গোয়েন্দা তৎপরতা ভেস্তে গেল: দুই এজেন্ট ধরা

ইরানে ইসরায়েলি গোয়েন্দা তৎপরতা ভেস্তে গেল: দুই এজেন্ট ধরা

ছবি: এ আই

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইরানের আলবর্জ প্রদেশের সাভোজবোলাগ এলাকায় গোপন এক আস্তানায় অভিযান চালিয়ে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী দুজন মোসাদ এজেন্টকে গ্রেপ্তার করেছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের বরাতে জানা গেছে, গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা বিস্ফোরক, বোমা, বুবি ট্র্যাপ এবং অত্যাধুনিক বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছিল। নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, এই অভিযান পরিচালনা করে ইরানের ফরাসুদা এবং আলবর্জ প্রদেশ পুলিশ গোয়েন্দা বিভাগ।

ইরানি নিরাপত্তা সংস্থার বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সদস্য। তারা বিস্ফোরক তৈরির উপকরণ, ইলেকট্রনিক ডিভাইস এবং গোপন যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালাতে চেয়েছিল।” উদ্ধার হওয়া সামগ্রীর মধ্যে ছিল বোমা তৈরির সরঞ্জাম, ডেটা ট্রান্সমিশন যন্ত্র ও দূরনিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরক প্রযুক্তি।

তবে এজেন্টদের পরিচয়, নাগরিকত্ব বা অভিযান সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য এখনো গোপন রাখা হয়েছে। দেশটির প্রচলিত গ্যাগ অর্ডার অনুযায়ী নিরাপত্তা বাহিনী গ্রেপ্তার সংক্রান্ত তথ্য সীমিতভাবে প্রকাশ করেছে।

মোসাদ কী এবং কেন এত আলোচিত?

ইসরায়েলের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গোপন মিশন পরিচালনার জন্য পরিচিত। হিব্রু ভাষায় এর পুরো নাম ‘হা-মোসাদ লেমোডিয়িন উলেতাফকিদিম মে-ইউখাদিম’, অর্থাৎ “গোপন তথ্য সংগ্রহ ও বিশেষ দায়িত্বের প্রতিষ্ঠান”। এর মূল কাজ হলো বিদেশে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান ও গুপ্তহত্যা।

১৯৭০ ও ৮০-র দশকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্যালেস্টাইনি নেতাদের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মোসাদের নাম জড়ায়। ২০১০ সালে তেহরানে ইরানি পারমাণবিক বিজ্ঞানী মাসউদ আলি-মোহাম্মাদিকে হত্যার পেছনেও মোসাদের হাত থাকার অভিযোগ তোলে ইরান। ২০১৮ সালে ইরানের পরমাণু আর্কাইভ থেকে গোপন তথ্য চুরির ঘটনাতেও মোসাদের সাফল্যের কথা আন্তর্জাতিকভাবে আলোচিত হয়।

আঞ্চলিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপট

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা মারাত্মকভাবে বেড়েছে। ইসরায়েল একাধিকবার সিরিয়া ও ইরাকে ইরান-সমর্থিত বাহিনীর ওপর বিমান হামলা চালিয়েছে। জবাবে ইরানও ইসরায়েলি ভূখণ্ডে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা করেছে। এই পরিস্থিতিতে ইরানে মোসাদের এজেন্টের উপস্থিতি ও নাশকতার প্রস্তুতির তথ্য নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই গ্রেপ্তারের ঘটনা কেবল ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের অংশ নয়, বরং গোটা মধ্যপ্রাচ্যেই গুপ্তচরবৃত্তি ও পাল্টা-আক্রমণের জটিল প্রেক্ষাপটকে সামনে এনে দিয়েছে।

সরকার ও আন্তর্জাতিক মহলের প্রতিক্রিয়া

এখনও পর্যন্ত ইসরায়েলি সরকার কিংবা মোসাদ এই গ্রেপ্তারের বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। আন্তর্জাতিক মহল থেকেও বড় কোনো বিবৃতি আসেনি। তবে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এ ঘটনা পরবর্তী সপ্তাহগুলোতে নতুন কোনো সাইবার বা সামরিক উত্তেজনার ইঙ্গিত দিতে পারে।

ইরান সরকার জানিয়েছে, গ্রেপ্তার হওয়া দুই ব্যক্তি ইরানে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাতে এসেছিল’ এবং তাদের সঙ্গে থাকা প্রযুক্তি সেটিই প্রমাণ করে। এ বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু হয়েছে এবং নিকট ভবিষ্যতে আরও তথ্য প্রকাশ করা হতে পারে।