বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, যশোর: যশোর সদর উপজেলার আরবপুর ইউনিয়নের জামতলায় ৫৫ বছরের পুরোনো ঈদগাহটি রাতের আঁধারে গায়েব করে দেয়ার ঘটনায় গ্রামে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় কয়েকজন বিএনপি নেতা মিলে এই ঈদগাহ দখল করে নিয়েছেন এবং জমির ওপর থাকা মূল্যবান গাছ বিক্রি করে দিয়েছেন লক্ষাধিক টাকায়।
স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, “সুজলপুর জামতলা কেন্দ্রীয় ঈদগাহ” নামের এই জমিতে ১৯৭১ সালের পর থেকে নিয়মিত ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। সাত শতক আয়তনের এ জমিটি একসময় পাচু ঋষি নামে এক ব্যক্তির নামে ছিল, যিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে চলে যান। পরবর্তীতে তা খাস খতিয়ানভুক্ত হয় বাংলাদেশ সরকারের নামে। এরপর থেকেই জমিটি রাজনৈতিক দলগুলোর দখল-বেদখলের খেলায় পরিণত হয়।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, সম্প্রতি জমিটি দখলের জন্য কৌশলী পন্থা অবলম্বন করেছে সোহরাব হোসেনের নেতৃত্বাধীন একটি চক্র। শুরুতে জমি স্থানীয় মেহের ভান্ডারীর পাঁচ ছেলের নামে দখলে নিয়ে পরে বায়নার মাধ্যমে নিজেরা মালিক বনে যান স্বেচ্ছাসেবক দলের সোহরাব ও বিএনপি নেতা সেলিম বিশ্বাস। স্থানীয়রা দাবি করেন, জমির কোনো বৈধ দলিল না থাকলেও জাল কাগজপত্র তৈরির মাধ্যমে জমিটি দখলে নেওয়া হয়েছে। এমনকি সম্প্রতি রাতের অন্ধকারে ঈদগাহের মিনার ভেঙে সরিয়ে নেয়া হয় এবং বহু পুরনো একটি মেহগনি গাছ কেটে ফেলে বিক্রি করে দেওয়া হয়।
ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি নুরুল ইসলাম জানান, ২০১৪ সালে জেলা প্রশাসনের অনুমতিক্রমে এখানে স্থায়ী মিনার নির্মাণ করা হয় এবং ঈদগাহের স্বীকৃতি মেলে। তার অভিযোগ, একটি প্রভাবশালী মহল জাল দলিল তৈরির মাধ্যমে জমিটি দখলে নিয়েছে। এলাকাবাসী প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
অন্যদিকে অভিযুক্ত সোহরাব হোসেন বলেন, আদালতের রায়ে মেহের ভান্ডারীর উত্তরসূরিরা জমির বৈধ মালিক হয়েছেন এবং তিনি তাদের কাছ থেকে জমি বায়না করে নিয়েছেন। তবে যশোরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) নুসরাত ইয়াসমিন জানান, সরকারি খাস জমি দখল বা বিক্রির কোনো বৈধতা থাকতে পারে না। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।
বিএনপির জেলা সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে দলীয়ভাবে বিষয়টি তদন্ত করা হবে।
গ্রামবাসীরা বলছেন, সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে জমির দখলদার পাল্টেছে, কিন্তু এই জমিতে ঈদের নামাজ বন্ধ হয়নি কখনও। এখন সেটি গায়েব করে দেয়ায় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে এবং তারা এর বিচার দাবি করছেন।