Home Third Lead কোরবানির গোশত বণ্টনের শরিয়তসম্মত নিয়ম: ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দেওয়ার মানবিক দিক

কোরবানির গোশত বণ্টনের শরিয়তসম্মত নিয়ম: ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দেওয়ার মানবিক দিক

মওলানা মোহাম্মদ কাউসার:  পবিত্র ঈদুল আজহার অন্যতম শিক্ষা আত্মত্যাগ ও সহানুভূতি। এই দিনটি শুধু পশু কোরবানির আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এর সঙ্গে যুক্ত থাকে মানুষের ভ্রাতৃত্ববোধ ও মানবিকতা প্রকাশের অনন্য সুযোগ। কোরবানির গোশত বণ্টনও সেই চেতনাকে বাস্তব রূপ দেওয়ার অন্যতম মাধ্যম। শরিয়ত এই বণ্টন পদ্ধতি নিয়ে পরিষ্কার নির্দেশনা দিয়েছে, যা পালন করলে সমাজে সৃষ্টি হয় সাম্য, সহযোগিতা ও সম্প্রীতির পরিবেশ।

ইসলামী বিধান অনুযায়ী, কোরবানির পশুর গোশতকে তিনভাগে ভাগ করাই উত্তম (মুস্তাহাব)। এক ভাগ নিজের ও পরিবারের জন্য রাখা হয়, এক ভাগ আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের মধ্যে বিতরণ করা হয় এবং অপর এক ভাগ দেওয়া হয় গরিব ও মিসকিনদের। এই পদ্ধতিই অনুসরণ করেছেন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)। তিনি কোরবানির গোশতের একাংশ নিজে খেতেন, একাংশ দিতেন আত্মীয়-স্বজনকে এবং বাকি অংশ বিতরণ করতেন সমাজের অভাবী মানুষের মধ্যে।

আল-কোরআনের সুরা হজ-এর ২৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, “অতঃপর তোমরা তা থেকে খাও এবং দুঃস্থ, অভাবগ্রস্তকে আহার করাও।” পাশাপাশি হাদিসেও এসেছে, “তোমরা নিজেরা খাও, অন্যকে আহার করাও এবং সংরক্ষণ কর।” (সহিহ বুখারি)

তবে এই তিন ভাগে বণ্টন বাধ্যতামূলক নয়, বরং উত্তম পদ্ধতি। কেউ চাইলে গোটা কোরবানির গোশত গরিবদের দান করতে পারেন, আবার প্রয়োজন হলে সবটুকু নিজেও খেতে পারেন। তবে গরিব ও মিসকিনদের অগ্রাধিকার দেওয়া শরিয়তের মানবিক আহ্বান। এ ক্ষেত্রে আত্মীয়দের মধ্যে যারা আর্থিকভাবে দুর্বল, প্রতিবেশী যারা একাকী বা অসহায়, তাদের উপযুক্ত গুরুত্ব দেওয়াই সুন্নত।

কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোরবানির গোশত পুরোপুরি নিজে রেখে দেওয়া হয় অথবা বিতরণে শুধুই ধনী আত্মীয়দের প্রাধান্য দেওয়া হয়। এসব বিষয় শরিয়তের চেতনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—কসাইকে কোরবানির গোশত বা চামড়া পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া শরিয়তসম্মত নয়। কসাইয়ের পারিশ্রমিক নগদ অর্থে দেওয়া উচিত। কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করে তার অর্থও দান করা উত্তম, ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার সংগত নয়।

গোশত সংরক্ষণের বিষয়ে ইসলাম নমনীয়। আধুনিক ফ্রিজ বা হিমঘরে সংরক্ষণ করা জায়েজ। তবে বিতরণের সময় স্বাস্থ্যবিধি ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা আবশ্যক।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কোরবানির গোশতের সঠিক বণ্টনের মাধ্যমে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মধ্যে ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব। এই আয়োজন একদিকে যেমন আত্মিক প্রশান্তি এনে দেয়, অন্যদিকে সমাজে তৈরি করে সহানুভূতি ও সৌহার্দ্যের পরিবেশ।

📢 পবিত্র কোরবানির দিনে সবার মাঝে ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দিন, জানুন শরিয়তসম্মতভাবে কোরবানির গোশত বণ্টনের নিয়ম!
❤️ যদি প্রতিবেদনটি আপনার ভালো লেগে থাকে, তাহলে লাইক দিন
🔄 বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন
💬 আপনার মতামত কমেন্টে জানান—আপনি কিভাবে গোশত বণ্টন করছেন?

📲 আরও ইসলামিক প্রতিবেদন পেতে চোখ রাখুন বিজনেসটুডে২৪.কম-এ!