বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার: ঈদের আনন্দ পরিণত হলো শোকের মাতমে। মৌলভীবাজারের জুড়ীতে নিজ বাড়ির পুকুরে মেয়েকে সাঁতার শেখাতে গিয়ে ডুবে প্রাণ হারিয়েছেন বাবা। মৃত্যুর করাল গ্রাস থেকে রক্ষা পেল না সেই তরুণী কন্যাও।
সোমবার (৯ জুন) বিকেল সাড়ে ৩টায় উপজেলার জায়ফরনগর ইউনিয়নের হামিদপুর গ্রামে এ হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন হামিদপুর গ্রামের মৃত খুর্শীদ আলীর পুত্র, স্থানীয় ব্যবসায়ী বাবুল ব্রিকস-এর মালিক বাবুল আহমদ বাবু (৫৮) এবং তাঁর মেয়ে হালিমা আক্তার (১৮)।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে পরিবার নিয়ে ঢাকায় বসবাস করছিলেন বাবুল আহমদ। এবারের ঈদ উদযাপন করতে স্ত্রী-সন্তানসহ ফিরে এসেছিলেন শৈশবের গ্রামে। হয়তো ভাবেননি, এই ফেরা হবে জীবনের শেষবারের মতো।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী হালিমা আক্তার সাঁতার জানত না। বাবার মমতায় মেয়েকে সাঁতার শেখাতে নিজ বাড়ির পুকুরে নামেন বাবুল আহমদ। একটি ভাসমান বাহনে মেয়েকে নিয়ে পুকুরে ভেসে ছিলেন তিনি। হঠাৎ কোনো এক মুহূর্তে হালিমা সেই বাহন থেকে ছিটকে পড়ে যায় পানিতে।
বাবা বাবুল দেরি না করে ঝাঁপিয়ে পড়েন মেয়েকে উদ্ধারের জন্য। কিন্তু তখনো হয়তো বুঝে উঠতে পারেননি, এই পানি তাঁর জন্য হবে মৃত্যুকূপ। নরম কাদার নিচে, নির্জন দুপুরের অজস্র ঢেউয়ের নিচে চাপা পড়ে যায় এক পিতা ও এক কন্যার শেষ নিঃশ্বাস।
বাড়ির লোকজনের চিৎকারে ছুটে আসেন প্রতিবেশীরা। অনেক খোঁজাখুঁজির পর তাদের উদ্ধার করে কুলাউড়া হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দুজনকেই মৃত ঘোষণা করেন।
একই পরিবারের দুই প্রাণ এভাবে একসঙ্গে ঝরে যাওয়ার ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী কেউ চোখের জল আটকে রাখতে পারছেন না। নিহত বাবুল আহমদের ছোট ভাই ব্যবসায়ী বদরুল ইসলাম এবং জুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোরশেদুল আলম ভূঁইয়া ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
এক পিতা শেষবারের মতো চেষ্টা করেছিলেন তাঁর কন্যাকে জীবন বাঁচাতে শেখাতে—সাঁতারের নামে। কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাসে সেই চেষ্টাই শেষ অধ্যায় হয়ে রইল তাদের জীবনের।
আমাদের চারপাশে এমন কত অসচেতন মুহূর্তে প্রাণ হারিয়ে যাচ্ছে প্রিয়জন! আপনার সন্তানকে সাঁতার শেখাতে হলে খেয়াল রাখুন নিরাপত্তার সব দিক। আপনার সামান্য সচেতনতা বাঁচাতে পারে একটি জীবন, একটি পরিবার, একটি ভবিষ্যৎ।
আপনার অভিমত বা অভিজ্ঞতা জানাতে কমেন্ট করুন, শেয়ার করে সতর্ক করুন অন্যদেরও।