বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক:
ঠিক এক বছর আগে পাকিস্তানের দক্ষিণ সিন্ধু প্রদেশের সাংঘর জেলায় এক জমির মালিকের নৃশংস হামলায় পা হারিয়েছিল এক কিশোরী উট ক্যামি। সেই ক্যামি মঙ্গলবার সকালে প্রথমবারের মতো আবারও চার পায়েই হাঁটলো, কৃত্রিম পায়ের সাহায্যে। আর এই দৃশ্য দেখে আবেগে ভেসেছেন তার তত্ত্বাবধায়কেরা।
উটটিকে পুনরায় হাঁটার উপযোগী করে তোলার জন্য দীর্ঘ সময় ধরে চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও মানসিক সেবা দেওয়া হয় করাচির সিডিআরএস বেনজি প্রকল্পের পশুকল্যাণ আশ্রয়কেন্দ্রে। এতে সহায়তা করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি কৃত্রিম অঙ্গ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ও সিন্ধু প্রাদেশিক সরকার।
“আজ আমার আনন্দের সীমা নেই,” বলছিলেন আশ্রয়কেন্দ্রের পরিচালক সারাহ জাহাঙ্গীর। “আমি ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না, কীভাবে বোঝাব যে ক্যামিকে নতুন পায়ে দাঁড়াতে দেখে আমি কতটা আবেগাপ্লুত।”
তিনি আরও বলেন, “আমার দলটির জন্য আমি গর্বিত। তারা অসম্ভবকে সম্ভব করেছে।”
সারাহ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন সিনেটর কুরাত-উল-আইন মারি ও তার বোন, সিন্ধু প্রাদেশিক এমপি শাজিয়া মারির প্রতি।
“তারা না থাকলে ক্যামির জীবন রক্ষা পেত না। তারা আমাদের বিশ্বাস করেছেন, পাশে থেকেছেন। আমি চিরকৃতজ্ঞ।”
গত বছর খাবারের খোঁজে ক্যামি একটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ঢুকে পড়ে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওই জমির মালিক ধারালো অস্ত্র দিয়ে ক্যামির সামনের একটি পা কেটে দেয়।
এই নির্মম ঘটনার ভিডিও ও খবর প্রকাশের পর দেশজুড়ে তীব্র জনরোষ সৃষ্টি হয়। সরকার হস্তক্ষেপে বাধ্য হয় এবং পশু-নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পাকিস্তানে পশু অধিকার আইন থাকলেও খুব কম ক্ষেত্রেই তা কার্যকর হয়।
দুই মাস আগে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়াভিত্তিক প্রতিষ্ঠান বায়োনিক পেটস ক্যামির জন্য বিশেষভাবে তৈরি একটি কৃত্রিম পা পাঠায়। তবে শারীরিক ক্ষত নিরাময়ের পাশাপাশি মানসিক প্রস্তুতির জন্যও অপেক্ষা করতে হয়েছে।
“সে এক ভয়পাওয়া শিশু ছিল,” বলছিলেন আশ্রয়কেন্দ্র ব্যবস্থাপক শিমা খান, যিনি ক্যামির হাঁটার দৃশ্য দেখে কেঁদে ফেলেন।
ক্যামির মানসিক পুনর্বাসনের জন্য আশ্রয়কেন্দ্রে তার পাশে রাখা হয় আরেকটি উদ্ধারকৃত উট, ক্যালিকে। এই নতুন বন্ধুত্ব ছিল ক্যামির জন্য আশীর্বাদ। ক্যালির আগমনের রাতেই ক্যামি প্রথমবারের মতো নিজে থেকে উঠে দাঁড়ায়।
তবে দাঁড়ালেও হাঁটতে পারেনি সে— যতক্ষণ না মঙ্গলবার সকালের সেই ঐতিহাসিক মুহূর্ত এসে হাজির হয়।
“ক্যামিকে হাঁটতে দেখে আমরা নিশ্চিত হলাম, আমাদের সব পরিশ্রম সার্থক হয়েছে,” বলছিলেন সিনেটর কুরাত-উল-আইন মারি।
“যখন এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে, তখন সাংঘরের নির্বাচিত সংসদ সদস্য হিসেবে আমার বোন শাজিয়া মারি চরমভাবে মর্মাহত হন। এরপরই সিন্ধু সরকার ও সিডিআরএস বেনজির নিবেদিতপ্রাণ স্বেচ্ছাসেবকদের সহযোগিতায় আমরা ক্যামিকে আবার পায়ে দাঁড় করানোর সংকল্প করি। আজ আমরা তা বাস্তব করলাম। আল্লাহর অশেষ রহমত।”