বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক: যানজটে বসে থাকার বিরক্তি থেকে মুক্তি পেতে ট্রাফিক জ্যামের ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার স্বপ্ন অনেকেই দেখেন। সেই কল্পবিজ্ঞানের দৃশ্য এবার বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে। দীর্ঘ এক দশকের গবেষণার পর অবশেষে উৎপাদন শুরু হয়েছে বিশ্বের প্রথম ‘উড়ন্ত গাড়ি’ বা ফ্লাইং কারের।
যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালিতে অবস্থিত প্রতিষ্ঠান ‘আলেফ অ্যারোনটিক্স’ (Alef Aeronautics) ঘোষণা করেছে যে, তাদের বহু প্রতীক্ষিত ‘মডেল এ আল্ট্রালাইট’ (Model A Ultralight)-এর উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
গাড়িটির বিশেষত্ব ও প্রযুক্তি
এই ফিউচারিস্টিক বা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের গাড়িটি সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিক। এর বিশেষত্ব হলো, এটি সাধারণ গাড়ির মতোই রাস্তায় চলতে পারে এবং প্রয়োজনে আকাশেও উড়তে পারে। ওড়ার জন্য এতে ৮টি শক্তিশালী প্রপেলার ব্যবহার করা হয়েছে, যা গাড়ির কার্বন-ফাইবার জালের (mesh body) বডির ভেতরে লুকানো থাকে। ফলে এটি খাড়াভাবে ওপরে উঠতে (eVTOL) সক্ষম এবং ওড়ার জন্য কোনো রানওয়ের প্রয়োজন হয় না।
দাম ও গতি
আলেফ অ্যারোনটিক্সের এই উড়ন্ত গাড়িটির দাম ধরা হয়েছে প্রায় ২ লাখ ৩৫ হাজার পাউন্ড।
আকাশে গতি: এটি ঘণ্টায় ১১০ মাইল (১৭৭ কিলোমিটার) বেগে উড়তে পারবে।
রাস্তায় গতি: এটি রাস্তায় সাধারণ ইলেকট্রিক গাড়ির মতোই চলে। তবে ওজনের শ্রেণিবিভাগ অনুযায়ী আইনি সীমাবদ্ধতার কারণে রাস্তায় এর গতি ঘণ্টায় ২৫ মাইল (৪০ কিলোমিটার) রাখা হয়েছে, যদিও এর ক্ষমতা আরও বেশি।
রেঞ্জ: একবার চার্জ দিলে এটি রাস্তায় ২০০ মাইল (৩২১ কিমি) এবং আকাশে ১১০ মাইল (১৭৭ কিমি) পর্যন্ত যেতে পারবে।
ধারণক্ষমতা: এতে চালকসহ মোট দুজন বসার ব্যবস্থা রয়েছে।
উৎপাদন ও সরবরাহ
কোম্পানিটি জানিয়েছে, গাড়িগুলো বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের কারখানায় হাতে তৈরি (hand-assembled) করা হচ্ছে। প্রতিটি গাড়ি নিখুঁতভাবে তৈরি করতে কয়েক মাস সময় লাগবে। প্রাথমিক পর্যায়ে অল্প কিছু গ্রাহককে এই গাড়ি সরবরাহ করা হবে, যারা অত্যন্ত ‘নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে’ গাড়িটি পরীক্ষামূলকভাবে চালাবেন। গণহারে উৎপাদনের আগে সম্ভাব্য ত্রুটিগুলো চিহ্নিত করতেই এই ধীরগতির সরবরাহ প্রক্রিয়া বেছে নেওয়া হয়েছে।
সিইও-এর বক্তব্য
আলেফ অ্যারোনটিক্সের সিইও জিম দুখভনি বলেন, “আমরা অত্যন্ত আনন্দের সাথে জানাচ্ছি যে, আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথম উড়ন্ত গাড়ির উৎপাদন শুরু হয়েছে। মানুষ দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করছে, তাই আমাদের দল সময়সীমা পূরণে কঠোর পরিশ্রম করেছে।” তিনি আরও জানান, গাড়িটি চালানো শেখা খুবই সহজ এবং মাত্র ১৫ মিনিটেই এটি আয়ত্ত করা সম্ভব।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও জনপ্রিয়তা
ইতিমধ্যেই গাড়িটি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। ২০২৩ সালে এটি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FAA) থেকে ওড়ার সনদ পেয়েছে। কোম্পানিটি দাবি করেছে, তাদের কাছে ইতিমধ্যেই ৩,৫০০টি প্রি-অর্ডার এসেছে, যার মোট মূল্য ৮০ কোটি পাউন্ডেরও বেশি।
জিম দুখভনি আশা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যতে বড় পরিসরে উৎপাদন শুরু হলে এই প্রযুক্তির দাম কমে আসবে এবং তা সাধারণ মানুষের সাধ্যের মধ্যে (প্রায় ২৫,০০০ পাউন্ড) নিয়ে আসা সম্ভব হবে। তবে এখনই ‘দ্য জেটসনস’ কার্টুনের মতো আকাশজুড়ে গাড়ি উড়তে দেখার সুযোগ নেই; আপাতত এটি কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে নির্দিষ্ট গ্রাহকদের হাতেই তুলে দেওয়া হচ্ছে।
এ ধরণের আরও গুরুত্বপূর্ণ আপডেট পেতে ভিজিট করুন www.businesstoday24.com










