Home Third Lead উত্তরায় বিমান বিধ্বস্ত: ‘আগুনে ঘেরা ক্লাসরুম থেকে বাঁচার লড়াই’

উত্তরায় বিমান বিধ্বস্ত: ‘আগুনে ঘেরা ক্লাসরুম থেকে বাঁচার লড়াই’

ছবি সংগৃহীত
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়িতে বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় আতঙ্ক, ধোঁয়া ও আগুনের মধ্যে শিক্ষার্থীদের রক্ষায় জীবনপণ লড়াইয়ের কথা জানালেন মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক শিক্ষক। তার হাত ও মুখে পুড়ে যাওয়া দাগ এখনও স্পষ্ট, কিন্তু তার কণ্ঠে ফুটে উঠছিলো শিক্ষার্থীদের জন্য উদ্বেগ আর ভালোবাসার দহন।

সোমবার দুপুর ১টা ৬ মিনিটে বিমান বাহিনীর এফ-৭ বিজিআই প্রশিক্ষণ বিমানটি মাইলস্টোন স্কুলের একটি ভবনের ওপর আছড়ে পড়ে। সেই সময় ভবনটির নিচতলায় ছুটির ঘণ্টা পড়ে গেছে, শিক্ষার্থীরা গেটে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলো বাড়ি ফেরার অপেক্ষায়।

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ওই শিক্ষক বলেন, “ঘটনাটি এতটাই আকস্মিক ছিল যে কারোরই কোনো প্রতিক্রিয়া দেখানোর সুযোগ ছিল না। কী ঘটছে তা বোঝার আগেই চারপাশে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তেই দৃষ্টিসীমা কমে এল। শুধু আগুন, তারপর ধোঁয়া।”

নিজের আঘাতের কথা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমার হাত পুড়ে গিয়েছে। শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছিল। আমার মুখ ও কান ঝলসে গেছে।”
তবু ভয় বা যন্ত্রণায় তিনি দমে যাননি। ঝুঁকি নিয়েই কাছে থাকা শিশুদের রক্ষা করার চেষ্টা করেন।

“ওয়াশরুমে গিয়ে একটা ভেজা কাপড় এনে নিজের নাক ঢাকলাম,” বলেন তিনি। “বাচ্চাদেরও বললাম শার্ট দিয়ে নাক-মুখ ঢাকতে। অনেকের জামায় আগুন ধরে গিয়েছিল। আমি তাদের নিচু হয়ে থাকতে বললাম। যাতে ধোঁয়ায় শ্বাস না নেয়ার চেষ্টা করে। সেই মুহূর্তে সময় বলতে কিছু ছিল না, কেবল বাঁচার তাগিদ।”

তিনজন শিক্ষার্থীকে নিয়ে তিনি ধোঁয়ার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসেন। তাদের মধ্যে একজন শিক্ষার্থী মারাত্মকভাবে দগ্ধ হয়, তাকে দ্রুত সিএমএইচ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

“শরীরের কিছু অংশে তার চামড়া উঠে গিয়েছিল। আমি নিজের কাপড় দিয়ে তাকে মুড়িয়ে নিয়ে যাই। আমি নিজেও তখন যন্ত্রণায় কাতর। কিন্তু ভেঙে পড়লে আরও বিপদ হতো। নিজেকে স্থির রেখে ওদের সাহস জোগাতে চেষ্টা করেছি,” বলেন এই বীর শিক্ষক।

বিমান আছড়ে পড়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই উদ্ধার অভিযান শুরু হয়। তবে আগুন ছড়াতে সময় নেয়নি এক সেকেন্ডও।
কথা বলার সময় শিক্ষকের গলা কাঁপছিল। “ভেতরে যারা ছিল, তাদের কথা মনে করে এখনও কেঁপে উঠছি,” বলেন তিনি।

ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে বিমান বাহিনী তদন্ত শুরু করেছে। এ ঘটনায় কতজন আহত হয়েছেন বা প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে কিনা, সে বিষয়ে এখনো সরকারিভাবে বিস্তারিত জানানো হয়নি।