উত্তরের জীবনরেখা:কুড়িগ্রামকে জানুন কাছ থেকে
বাংলাদেশের উত্তর সীমান্তে অবস্থিত কুড়িগ্রাম যেন এক অবহেলিত সম্ভাবনার নাম। নদীভাঙন, দারিদ্র্য, দুর্যোগ আর উন্নয়নবঞ্চনার ছাপ পড়ে আছে এই জেলার প্রতিটি জনপদে, প্রতিটি মুখে। অথচ এখানেই জড়িয়ে আছে কৃষির প্রাণ, সীমান্ত সুরক্ষা, নদীজ উপহার আর হাজারো মানুষের স্বপ্ন।
বিজনেসটুডে২৪.কম-এর পক্ষ থেকে শুরু হলো এক বিশেষ ধারাবাহিক প্রতিবেদন—“উত্তরের জীবনরেখা: কুড়িগ্রামকে জানুন কাছ থেকে”। নয়টি উপজেলার প্রতিটি অঞ্চল ঘুরে, চর থেকে সদর পর্যন্ত মানুষের মুখে মুখে সংগ্রামের গল্প শুনে এই সিরিজ তৈরি করেছেন আমাদের উত্তরাঞ্চলীয় প্রতিনিধি নয়ন দাস।
এই ধারাবাহিকের প্রতিটি পর্বে উঠে আসবে কুড়িগ্রামের ইতিহাস, ভূপ্রকৃতি, জীবনযাত্রা, নদী-ভাঙন, চরবাসীর জীবন, কৃষির সম্ভাবনা, সীমান্ত সংকট, সংস্কৃতি, এবং ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা।
আমরা বিশ্বাস করি—একটি জেলার জীবন বোঝার মধ্য দিয়ে একটি দেশের বাস্তবতাকে আরও গভীরভাবে ধরা যায়।
– এখনই পড়ুন।
ধারাবাহিক প্রতিবেদন: উত্তরের জীবনরেখা : কুড়িগ্রামকে জানুন কাছ থেকে
পর্ব ১: তিস্তা-পাড়ের জীবন: কুড়িগ্রামের প্রথম পরিচয়
নয়ন দাস, কুড়িগ্রাম: বাংলাদেশের উত্তরের শেষ প্রান্তে অবস্থিত এক নিভৃত জনপদের নাম কুড়িগ্রাম। এই জেলা যেন একদিকে বাংলাদেশের সীমান্ত প্রহরী, অন্যদিকে এক বঞ্চিত জনপদের প্রতিচ্ছবি। তিস্তা, ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের স্রোতধারায় বারবার প্লাবিত হলেও এখানকার মানুষ বারবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ইতিহাস, ভূগোল, জনসংখ্যা ও জীবনসংগ্রামে কুড়িগ্রাম এক স্বতন্ত্র পরিচয়ের নাম।
ইতিহাস ও নামের উৎস
কুড়িগ্রাম এক সময় রংপুর জেলার অন্তর্গত ছিল। ১৮৭৪ সালে এটি মহকুমা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং ১৯৮৪ সালে তা জেলা হিসেবে পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়। এই জেলার নামকরণ নিয়ে নানা মত রয়েছে। একটি প্রচলিত জনশ্রুতি অনুযায়ী, এক সময় এখানে ‘কুড়ি’ জন জমিদার একসঙ্গে বসবাস করতেন, তাদের সম্মিলিত অস্তিত্ব থেকেই ‘কুড়ি’ এবং ‘গ্রাম’ মিলে নাম হয় ‘কুড়িগ্রাম’। আবার কেউ বলেন, কোনো সময় এখানে কুড়িটি গ্রামের সমন্বয়ে একটি প্রশাসনিক অঞ্চল গঠিত হয়েছিল, যা থেকেই এই নামের উৎপত্তি।
ভৌগোলিক বিস্তৃতি ও অবস্থান
কুড়িগ্রাম জেলার উত্তরে ভারতের অসম রাজ্য, দক্ষিণে গাইবান্ধা জেলা, পূর্বে লালমনিরহাট ও ভারতের কোচবিহার এবং পশ্চিমে রংপুর ও লালমনিরহাট জেলা। জেলার আয়তন প্রায় ২,২৯৬ বর্গকিলোমিটার। এই জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নদীগুলো—তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমার।
এই নদীগুলো যেমন এখানকার কৃষি ও জীবিকার আশীর্বাদ, তেমনি ভাঙন ও বন্যার অভিশাপও। বিশেষ করে ধরলার ভাঙনে প্রতি বছর শত শত পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়ে।
প্রশাসনিক কাঠামো ও জনসংখ্যা
কুড়িগ্রাম জেলায় ৯টি উপজেলা রয়েছে: কুড়িগ্রাম সদর, উলিপুর, রাজারহাট, চিলমারী, ভূরুঙ্গামারী, নাগেশ্বরী, ফুলবাড়ী, রৌমারী ও রাজীবপুর। ৭৩টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এই জেলার জনসংখ্যা প্রায় ২০ লক্ষাধিক।
এখানে রয়েছে বাংলার প্রান্তিক মানুষের সত্যিকারের চিত্র। গ্রামীণ জীবন, কৃষিনির্ভর অর্থনীতি, নদী-চর-জলবেষ্টিত জনপদের স্বপ্নভঙ্গ ও সংগ্রামের কথাই উঠে আসে প্রতিটি বাড়ি ও মুখে।
শিক্ষার হার ও জীবনমান
জাতীয় গড়ের তুলনায় কুড়িগ্রামে শিক্ষার হার অনেক কম। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, জেলায় শিক্ষার হার ৫০ শতাংশের নিচে। অধিকাংশ স্কুল নদীভাঙনের কবলে পড়ে স্থানচ্যুত হয়। উচ্চ শিক্ষার জন্য মানুষকে যেতে হয় রংপুর কিংবা ঢাকায়।
জেলার অধিকাংশ মানুষ কৃষি, দিনমজুরি বা সীমান্ত ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। কাজের অভাবে অনেকে পাড়ি জমায় দেশের অভ্যন্তরে কিংবা ভারতে অবৈধভাবে।
কেন কুড়িগ্রাম আলাদা?
বাংলাদেশে দরিদ্রতার চিত্র বোঝাতে অনেকেই বলে থাকেন—‘কুড়িগ্রামের চেয়েও গরিব’। যদিও এ বাক্যটিতে আছে অবজ্ঞার সুর, কিন্তু এর পেছনে রয়েছে বাস্তবতার কঠিন রূপরেখা। কুড়িগ্রামের মানুষ একদিকে দেশের সীমান্ত পাহারা দেয়, অন্যদিকে প্রকৃতি ও সরকারের উদাসীনতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।
এই জেলার প্রতিটি চর, প্রতিটি বাঁধ আর প্রতিটি ক্ষয়ে যাওয়া নদীতীর মানুষের মুখে লুকিয়ে আছে এক দীর্ঘ ও গভীর জীবনগাঁথা। এই গল্প আমরা তুলে ধরব পরবর্তী পর্বগুলোতে।
🔗 আপনার মতামত আমাদের জানাতে ভুলবেন না। কুড়িগ্রামের এই ধারাবাহিক প্রতিবেদন যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে লাইক দিন, শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের সঙ্গে ছড়িয়ে দিন।
📢 আপনি কি কুড়িগ্রামের বাসিন্দা, বা এই জেলার সঙ্গে জড়িয়ে আছে আপনার স্মৃতি? নিচে মন্তব্য করুন – আমরা শুনতে চাই আপনার কাহিনি।
📌 আগামীকাল প্রকাশিত হবে পর্ব–২: নদী আর মানুষের লড়াই – ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার ভয়াল মুখ। চোখ রাখুন বিজনেসটুডে২৪.কম–এ।