ধারাবাহিক প্রতিবেদন:
উত্তরের জীবনরেখা – কুড়িগ্রামকে জানুন কাছ থেকে
শেষ পর্ব
নয়ন দাস, কুড়িগ্রাম: এক সময় কুড়িগ্রাম মানেই ছিল নদীভাঙন, দারিদ্র্য আর সহানুভূতির প্রতিচ্ছবি। আজ সেই জেলার আকাশে উঁকি দিচ্ছে সম্ভাবনার আলো। এই জেলায় এখন গড়ে উঠছে নতুন সড়ক, আসছে বিদ্যুৎ, চালু হয়েছে রেলপথ, চলছে পরিকল্পনা কৃষি অর্থনীতি ও সীমান্ত বাণিজ্য নিয়ে। তবু প্রশ্ন থেকেই যায়—এই উন্নয়ন কি টেকসই? সাধারণ মানুষের জীবন কি বদলাচ্ছে?
রৌমারীর এক তরুণ শিক্ষক বলেন, “আমরা চাই, আমাদের সন্তানরা এখানেই বড় হোক, এখানেই পড়ালেখা করে চাকরি পাক। দরকার ভালো স্কুল-কলেজ।” চরাঞ্চলের কৃষকরা বলছেন, “জমি আছে, ফসল হয়, কিন্তু বাজারে পৌঁছাতে পারি না। ব্যাংক ঋণ পাই না।” বন্যা আর নদীভাঙনের কথা আসলেই স্থানীয়দের চাওয়া—“টেকসই বাঁধ আর আগাম সাড়া চাই সরকারের।”
জেলা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কুড়িগ্রামে নদীকেন্দ্রিক যোগাযোগ এবং কৃষি অর্থনীতির উন্নয়নের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের এক সদস্য জানিয়েছেন, “চরভিত্তিক অর্থনীতি, সীমান্ত হাট, হস্তশিল্প ও কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াকরণে কুড়িগ্রাম এগিয়ে যেতে পারে।”
এই জেলার প্রধান সম্ভাবনাগুলোর মধ্যে রয়েছে—প্রাকৃতিকভাবে উর্বর কৃষি জমি, সম্ভাবনাময় চরাঞ্চল, নদীভিত্তিক পরিবহন, ঐতিহ্যবাহী মেলা-পালা, ও সীমান্ত বাণিজ্যের সুযোগ। বিদ্যুৎ সংযোগ বাড়লেও এখনও অনেক চর অন্ধকারে। রাস্তাঘাট হয়েছে, কিন্তু অনেক সেতু এখনো সংযোগ সড়ক ছাড়া পড়ে আছে।
তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে প্রয়োজন কারিগরি শিক্ষা, উদ্যোক্তা সহায়তা এবং আইটি প্রশিক্ষণ। রেলপথ ও আন্তঃনগর ট্রেন ‘কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস’ কিছুটা ভরসা তৈরি করলেও তা কেন্দ্রিক উন্নয়নেই সীমাবদ্ধ। জেলা সদরের বাইরে উন্নয়নের ছোঁয়া পৌঁছায়নি এমন বহু জনপদ এখনো পিছিয়ে।
চিলমারি বন্দর, ধরলার পাড়, চান্দামারী মসজিদসহ ঐতিহ্যগত স্থানগুলোতে পর্যটন বিকাশেরও বিশাল সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সেগুলোর কোনো পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা এখনো মাঠে আসেনি। আর সীমান্ত হাটগুলোর কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ রয়ে গেছে।
কুড়িগ্রামকে একটি সম্ভাবনাময় জেলায় রূপ দিতে হলে চাই তিনটি জিনিস—সুশাসন, পরিকল্পিত বিনিয়োগ, এবং স্থানীয় জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ। চরাঞ্চলে বসবাসকারী নারী, কৃষক, মৎস্যজীবী, শিক্ষক—সবাই যদি উন্নয়নের অংশীদার হতে পারেন, তবে এই জেলা বদলাবে।
এই ধারাবাহিক প্রতিবেদনের প্রতিটি পর্বে উঠে এসেছে কুড়িগ্রামের বাস্তবতা—জীবনের কঠিন সংগ্রাম, সমাজের গভীর অনুশোচনা, এবং কিছু জ্বলজ্বলে স্বপ্ন। এখন সময় সেই স্বপ্নগুলো বাস্তব করার।
📢 এই প্রতিবেদনটি যদি আপনার চিন্তাকে নাড়িয়ে দেয়, অনুগ্রহ করে শেয়ার করুন—আপনার বন্ধু, সহকর্মী ও নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে।
📌 সম্পূর্ণ সিরিজ পড়তে ভিজিট করুন বিজনেসটুডে২৪.কম – কুড়িগ্রামের চর থেকে শহর, অতীত থেকে আগামীর সেতুবন্ধনে আমরা পাশে থাকব।