আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতের মণিপুর আবারও সহিংস উত্তেজনার মুখোমুখি। শনিবার থেকে রাজ্যের অন্তত পাঁচটি জেলায় নতুন করে কারফিউ জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে মোবাইল ডেটা ও ইন্টারনেট পরিষেবা। পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজ্য প্রশাসন কড়া ব্যবস্থা নিলেও রাজ্যের কয়েকটি স্থানে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে।
গত শনিবার রাজ্যের প্রভাবশালী মেইতেই সংগঠন ‘অরামবাই তেংগোল’-এর পাঁচ নেতাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তাঁদের মধ্যে অন্যতম কমান্ডার আসেম কানন। তাঁদের মুক্তির দাবিতে শুরু হয় আন্দোলন। এর পরপরই ইম্ফল পূর্ব, ইম্ফল পশ্চিম, থৌবল, কাকচিঙ ও বিষ্ণুপুর জেলায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
জনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে ওই পাঁচটি জেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। সন্ধ্যার পর পুরোপুরি কারফিউ ঘোষণা করে প্রশাসন। একই সঙ্গে শনিবার রাত সাড়ে এগারোটা থেকে শুরু করে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত ইন্টারনেট ও মোবাইল ডেটা পরিষেবা বন্ধ থাকবে। এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে ১২ জুন পর্যন্ত। প্রশাসনের ভাষ্য, যাতে ভুয়া তথ্য ও গুজব ছড়িয়ে সহিংসতা না বাড়ে, সে কারণে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিক্ষোভের সময় বিক্ষুব্ধ জনতা শহরের বিভিন্ন রাস্তায় টায়ার ও আসবাবপত্র জ্বালিয়ে প্রতিবাদ জানায়। পুলিশের বাধা পেয়ে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। নিরাপত্তা বাহিনী টিয়ার গ্যাস ছোড়ে এবং গুলি চালায়। এতে কয়েকজন সাংবাদিকসহ অন্তত তিনজন আহত হয়েছেন বলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে।
একাধিক ভিডিওতে দেখা গেছে, প্রতিবাদকারীরা শরীরে পেট্রল ঢেলে আত্মহত্যার হুমকি দিচ্ছে। এ ঘটনাগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। প্রশাসন জানায়, এসব পদক্ষেপ জনস্বার্থে নেওয়া হয়েছে এবং আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজ্যের মেইতেই অধ্যুষিত অঞ্চলে আন্দোলনের তীব্রতা সবচেয়ে বেশি। বেশ কিছু রাজনৈতিক নেতাও মেইতেই নেতাদের মুক্তির পক্ষে সরব হয়েছেন। রাজ্যের একাধিক বিধায়ক ও মন্ত্রী এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। অনেকের আশঙ্কা, পরিস্থিতি যদি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে না আনা যায়, তাহলে ২০২৩ সালের দাঙ্গার মতো বড় ধরনের সংঘর্ষ আবারও শুরু হতে পারে।
মণিপুর বর্তমানে আংশিক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মতো পরিচালিত হচ্ছে। রাজ্যপাল ও কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর তত্ত্বাবধানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার চেষ্টা চলছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে প্রশাসন সব ধরনের বৈঠক, সমাবেশ, এবং জমায়েত নিষিদ্ধ করেছে।
এদিকে বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজ্যে বারবার এ ধরনের সহিংসতা প্রমাণ করে যে মণিপুরে জাতিগত বিভাজন এখনো গভীরভাবে বিদ্যমান। রাজনৈতিক সংলাপ ও নিরপেক্ষ তদন্ত ছাড়া এই সংকটের সমাধান সম্ভব নয়।