Home অন্যান্য এআই চাকরি কাড়বে না, দক্ষরাই টিকে থাকবে

এআই চাকরি কাড়বে না, দক্ষরাই টিকে থাকবে

বদলে যাচ্ছে বৈশ্বিক কর্মবাজারের সমীকরণ

এআই ডেস্ক: বর্তমান বিশ্বে শ্রমবাজারের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই। সাধারণ মানুষের মধ্যে একটি গভীর উদ্বেগ কাজ করছে যে, এআই হয়তো মানুষের জায়গা দখল করে নেবে। তবে অর্থনৈতিক বিশ্লেষক এবং প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ধারণাটি সম্পূর্ণ সঠিক নয়। বরং প্রকৃত সত্য হলো— এআই মানুষের চাকরি সরাসরি কেড়ে নেবে না, কিন্তু যারা এআই ব্যবহারে দক্ষ, তারা অদক্ষ ব্যক্তিদের সরিয়ে জায়গা করে নেবে।

দক্ষতার প্রতিযোগিতায় নতুন মানদণ্ড

সম্প্রতি প্রকাশিত বিভিন্ন শ্রমবাজার সমীক্ষায় দেখা গেছে, কোম্পানিগুলো এখন নতুন কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে তার ‘এআই লিটারেসি’ বা এআই ব্যবহারের সক্ষমতাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। নিয়োগকর্তাদের মতে, একজন দক্ষ এআই ব্যবহারকারী সাধারণ কর্মীর তুলনায় প্রায় ৩ থেকে ৪ গুণ বেশি দ্রুত এবং নিখুঁতভাবে কাজ সম্পন্ন করতে পারেন।

কেন দক্ষরাই এগিয়ে থাকবে?

বিশেষজ্ঞরা এই পরিবর্তনের পেছনে তিনটি প্রধান কারণ উল্লেখ করেছেন:

দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ: এআই টুলগুলো বিশাল পরিমাণ ডেটা বিশ্লেষণ করে মুহূর্তের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। যারা এই টুলগুলো ব্যবহার করতে জানেন, তারা প্রতিষ্ঠানের জন্য দ্রুত ফলাফল বয়ে আনতে পারেন।

সৃজনশীল কাজে মনোযোগ: ডাটা এন্ট্রি বা ইমেইল সর্টিংয়ের মতো পুনরাবৃত্তিমূলক কাজগুলো এখন এআই করছে। ফলে দক্ষ কর্মীরা তাদের সময় ও মেধা কেবল জটিল সমস্যা সমাধান এবং সৃজনশীল পরিকল্পনায় ব্যয় করতে পারছেন।

খরচ ও সময়ের সাশ্রয়: একজন এআই-দক্ষ কর্মী একা একটি পুরো টিমের সমান কাজ পরিচালনা করতে সক্ষম হচ্ছেন, যা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা ব্যয় অনেকাংশে কমিয়ে দিচ্ছে।

বিপদ কেবল অদক্ষদের জন্য

গবেষণা সংস্থাগুলোর মতে, যারা প্রযুক্তির এই পরিবর্তনের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারছেন না বা পুরনো পদ্ধতিতে কাজ করতে অনড়, তারাই মূলত ছাঁটাইয়ের ঝুঁকিতে রয়েছেন। এটি কেবল আইটি খাতের জন্য নয়; বরং বিপণন (Marketing), ব্যাংকিং, শিক্ষা এবং প্রশাসনিক সকল ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

ভবিষ্যতের প্রস্তুতি

কিংসলে গেট-এর মতো বৈশ্বিক এক্সিকিউটিভ সার্চ ফার্মগুলোর মতে, কর্মক্ষেত্রে টিকে থাকতে হলে এখন থেকেই এআই-এর সাথে কাজ করার মানসিকতা তৈরি করতে হবে। প্রযুক্তিকে প্রতিপক্ষ না ভেবে একে ‘সহকারী’ হিসেবে গ্রহণ করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

উপসংহার: শিল্প বিপ্লবের সময় যেমন কায়িক শ্রমের জায়গায় যন্ত্র এসেছিল, তেমনি এই এআই বিপ্লবে মেধা ও কৌশলের জায়গায় যুক্ত হচ্ছে প্রযুক্তির ছোঁয়া। যারা এই ‘স্মার্ট ওয়ার্ক’-এর ধারা বুঝতে পারবেন, তাদের জন্য চাকরির বাজার আরও প্রসারিত হবে। আর যারা পিছিয়ে থাকবেন, তারা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবেন না—এটাই আধুনিক বাজারের কঠিন বাস্তবতা।