বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: বাংলাদেশের অর্থনীতি নতুন এক চ্যালেঞ্জের মুখে। সদ্য প্রকাশিত এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ‘এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক’ (এডিও) প্রতিবেদনের জুলাই ২০২৫ সংস্করণে জানানো হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ঘোষিত ৩৫ শতাংশ পালটা শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
এডিবি জানিয়েছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য পূর্বে যে ৫ দশমিক ১ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল, তা এখন সংশোধন করে কমিয়ে ধরা হচ্ছে। যদিও নির্দিষ্ট কোনো হার এই সংস্করণে উল্লেখ করা হয়নি, তবে আভাস মিলেছে যে রপ্তানি ও শিল্প খাতের ধীরগতির ফলে প্রবৃদ্ধির গতি আরও হ্রাস পেতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ও রপ্তানি সংকট
আগামী ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ পালটা শুল্ক কার্যকর হতে যাচ্ছে। তৈরি পোশাকসহ বেশ কিছু প্রধান রপ্তানি পণ্য এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ব্যবসায়ী ও বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, এই শুল্ক কার্যকর হলে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় বড় ধাক্কা খাবে, যার প্রভাব পড়বে শিল্প উৎপাদন, কর্মসংস্থান এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও।
সরকার এখন মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তবে এখনও নিশ্চিত কোনো সমাধানের লক্ষণ নেই।
মূল্যস্ফীতির পূর্বাভাস
প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে কিছুটা মূল্যস্ফীতি হ্রাস পেয়েছে। এর কারণ হিসেবে বৈশ্বিক পণ্যমূল্যের স্থিতিশীলতা এবং কঠোর আর্থিক ও রাজস্বনীতি কাজ করেছে। এসব অনুকূলতা অব্যাহত থাকলে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি আরও স্থিতিশীল থাকতে পারে বলে মনে করছে এডিবি।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও গোটা অঞ্চলের ঝুঁকি
এডিবি মনে করে, শুধু বাংলাদেশ নয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সব দেশই এবার প্রবৃদ্ধির মন্থর গতির মুখে পড়বে। ২০২৫ সালে এই অঞ্চলের গড় প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৪ দশমিক ২ শতাংশ এবং ২০২৬ সালে তা হবে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ। পূর্ববর্তী পূর্বাভাসের তুলনায় এই হার প্রায় অর্ধ শতাংশ কম।
২০২৫ সালে এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোর গড় প্রবৃদ্ধির হারও কমিয়ে ধরা হয়েছে ৪ দশমিক ৭ শতাংশ, যা এপ্রিলে ছিল ৪ দশমিক ৯ শতাংশ। ২০২৬ সালের প্রক্ষেপিত হারও কমিয়ে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ করা হয়েছে।
ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা ও জ্বালানি সংকট
প্রতিবেদনটি সতর্ক করে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতির পাশাপাশি ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা, সরবরাহ চেইনের বিঘ্ন এবং জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি গোটা অঞ্চলের অর্থনৈতিক অস্থিরতা বাড়িয়ে তুলতে পারে। এতে শুধু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া নয়, গোটা এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলেরই প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হবে।