Home আন্তর্জাতিক নিউইয়র্কে শেষ বিদায় বাঙালি বীর দিদারুলকে, কান্নায় ভেসেছে হাজারো পুলিশ

নিউইয়র্কে শেষ বিদায় বাঙালি বীর দিদারুলকে, কান্নায় ভেসেছে হাজারো পুলিশ

ছবি সংগৃহীত
মোস্তফা তারেক, নিউইয়র্ক:নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের (এনওয়াইপিডি) কর্মকর্তা দিদারুল ইসলামকে শেষ বিদায় জানাল গোটা শহর। ৩৬ বছর বয়সী এই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত পুলিশ সদস্যের মরদেহ যখন ব্রঙ্কসের জামে মসজিদ থেকে বের করা হয়, তখন এক ফোঁটা করে বৃষ্টি নেমে এসেছে, ঠিক যেন আকাশও কাঁদছিল।

দিদারুল ইসলাম, এক জনমুখর প্রবাসী, দুই সন্তানের জনক এবং আরেকটি অনাগত সন্তানের বাবা, ৩৪৫ পার্ক অ্যাভিনিউর দুঃস্বপ্নঘটিত বন্দুক হামলায় নিহত হন। হামলাকারী শেন তামুরা যখন লবিতে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে শুরু করেন, তখনই কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন দেন দিদারুল।

সংগৃহীত ছবি

বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) হাজারো পুলিশ সদস্য, শহরের মেয়র এরিক অ্যাডামস, গভর্নর ক্যাথি হোচুল ও পুলিশ কমিশনার জেসিকা টিশ উপস্থিত ছিলেন দিদারুলের জানাজায়। জেসিকা টিশ কান্নাভেজা কণ্ঠে বলেন, “সে নিউইয়র্কের প্রতিচ্ছবি—একজন অভিবাসী, একজন সেবক, একজন রক্ষক।” তিনি বলেন, “এই শহরের জন্য তার ছিল অগাধ ভালোবাসা। সে নিজেই বলেছিল, পুলিশ হলো একটি কম্বল, যা জনগণের জন্য সান্ত্বনার প্রতীক।”

জানাজা শেষে দিদারুল ইসলামকে মর্যাদার সঙ্গে ডিটেকটিভ ফার্স্ট গ্রেড পদে উন্নীত করা হয়, যা পুলিশ কমিশনারের ঘোষণা শুনেই সবার করতালি ও অশ্রুসজল সম্মান জানায়।

দিদারুলের সহকর্মী অফিসার পাবলোর সঙ্গে তার গভীর বন্ধুত্বের কথাও স্মরণ করেন টিশ। পাবলো ছিলেন ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র থেকে আসা, আর দিদারুল বাংলাদেশের সিলেট থেকে। দুই মহাদেশ থেকে আসা দুই পুরুষ নিউইয়র্ক শহরের ছায়াতলে হয়ে উঠেছিলেন পরম আত্মীয়।

জানাজায় দিদারুলের স্ত্রী নিজে না বললেও, তার বয়ান পড়ে শোনানো হয়। সেখানে লেখা ছিল, “সে ছিল আমাদের পৃথিবী। শহরের একজন পুলিশ অফিসার হিসেবে সে ছিল দায়িত্ববান, সাহসী এবং হৃদয়বান। সে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অন্যকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছে।”

জানাজা শেষে কফিনটি যখন বের করা হয়, তখন হাজারো পুলিশ কর্মকর্তা মাথায় ক্যাপ রেখে শ্রদ্ধায় নতমুখে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকেন। সাদা শববাহী গাড়িটি ধীরে ধীরে নিউ জার্সির টোটোওয়ায় রওনা দেয়—দিদারুলের চিরনিদ্রার ঠিকানায়।

সেদিন এক মুসলিম যুবক বলেন, “পুরো কমিউনিটি আজ কেঁদেছে। পুরোনো বন্ধু, সহকর্মী, প্রতিবেশী সবাই এসেছে তাকে শেষ দেখা দিতে। এত মানুষ একসঙ্গে দেখে মন শান্তি পেয়েছে এই শোকেও যেন এক ধরনের আশ্রয় ছিল।”