Home First Lead এনবিআর দুই ভাগে বিভক্ত, অধ্যাদেশ জারি করল সরকার

এনবিআর দুই ভাগে বিভক্ত, অধ্যাদেশ জারি করল সরকার

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) ভেঙে দুটি আলাদা বিভাগে ভাগ করে নতুন অধ্যাদেশ জারি করেছে সরকার। দীর্ঘদিন ধরে আলোচিত এই বিভাজন কার্যকর করতে উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদনের ২৫ দিন পর মঙ্গলবার মধ্যরাতে “জাতীয় রাজস্ব বোর্ড পুনর্গঠন অধ্যাদেশ ২০২৫” জারি করা হয়। এতে এনবিআরকে রাজস্ব নীতি এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা — এই দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।

অধ্যাদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, সরকার পরবর্তী সময়ে একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ অধ্যাদেশ কার্যকরের নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করবে। অর্থাৎ, এটি এখনই কার্যকর না হলেও খুব শিগগিরই এ দুটি বিভাগ বাস্তবায়নের পথে অগ্রসর হবে।

নতুন এই কাঠামোয় রাজস্ব নীতি বিভাগ থাকবে নীতিনির্ধারণ, আইন বিশ্লেষণ এবং কর আদায়ের পরিবেশ ও প্রবণতা পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে। অন্যদিকে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ হবে কর আদায় ও বাস্তবায়নের মূল বাহক। এই বিভাগের আওতায় থাকবে আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস বিভাগের কার্যক্রম।

অধ্যাদেশ অনুসারে, রাজস্ব নীতি বিভাগের কার্যপরিধিতে সামান্য পরিবর্তন আনা হয়েছে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের জন্য শুধু প্রশাসন ক্যাডার নয়, বরং আয়কর এবং কাস্টমস ক্যাডারের কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ, দুই প্রশাসনিক ক্যাডারের পাশাপাশি ট্যাক্স ক্যাডারের কর্মকর্তারাও এখানে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, এনবিআরের কাজের পরিধি ব্যাপক হলেও এর প্রশাসনিক কাঠামো দীর্ঘদিন ধরে এক কেন্দ্রভিত্তিক ছিল। এতে নীতি নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন এই দুই গুরুত্বপূর্ণ কাজ একত্রে থাকায় কার্যকরতা ব্যাহত হচ্ছিল। তাই এখন থেকে নীতি নির্ধারণ ও বাস্তবায়নের কাজ দুই বিভাগে বিভক্ত হয়ে আলাদাভাবে চলবে।

সরকার মনে করছে, এই বিভাজনের ফলে স্বচ্ছতা বাড়বে এবং কর প্রশাসন আরও দক্ষভাবে পরিচালিত হবে। এছাড়া নীতি নির্ধারণ প্রক্রিয়া রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখা এবং বাস্তবায়নে কর কর্মকর্তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাও সম্ভব হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এনবিআরের এই পুনর্গঠন দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে এনবিআরের স্বয়ংক্রিয়তা, কাঠামোগত উন্নয়ন ও দক্ষতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিচ্ছিল। এই প্রেক্ষাপটে অধ্যাদেশ জারি করে এনবিআরকে দুটি বিভাগে ভাগ করা ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

তবে নীতিগতভাবে বিভাগ বিভাজন কার্যকর হলেও এর বাস্তবায়ন সহজ হবে না বলেও মত দিয়েছেন রাজস্ব প্রশাসনের সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন কর্মকর্তা। তারা বলছেন, দুই বিভাগে ক্ষমতা ও দায়িত্ব বণ্টনের বিষয়টি স্পষ্ট না হলে বাস্তবে দ্বন্দ্ব ও সমন্বয়হীনতার আশঙ্কা থেকেই যাবে।

অর্থনীতিবিদরাও মনে করছেন, বাস্তবায়ন পর্যায়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত না হলে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হবে না।

সরকার এখনো নতুন কাঠামোয় নেতৃত্বের বিষয়টি নির্ধারণ করেনি। কে হবেন রাজস্ব নীতি বিভাগের প্রধান এবং কে হবেন ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে, তা নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে। ধারণা করা হচ্ছে, বর্তমান এনবিআর চেয়ারম্যানকে দুটি বিভাগের মধ্যে যেকোনো একটির নেতৃত্বে রাখা হতে পারে এবং নতুন একজনকে অন্য বিভাগের জন্য নিযুক্ত করা হবে।

বর্তমানে এনবিআরের আওতায় ৩১টি কর অঞ্চল ও ১২টি কাস্টমস কমিশনারেট রয়েছে। এই সব ইউনিট কোন বিভাগে যুক্ত হবে, তা পরবর্তী নির্দেশনায় পরিষ্কার করা হবে বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।