বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনার দায়িত্ব এবার দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম ড্রাইডক লিমিটেডকে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড–এর সাথে ১৭ বছরের চুক্তির মেয়াদ ৬ জুলাই ২০২৫ তারিখে শেষ হওয়ার পরদিন থেকেই ড্রাইডক অপারেশনের দায়িত্ব নিচ্ছে।
বন্দর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ডাইরেক্ট প্রকিউরমেন্ট মেথড (ডিপিএম)–এর আওতায় সরাসরি প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এতে চুক্তি স্বাক্ষর ও দায়িত্ব হস্তান্তরের প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক জানান, “৭ জুলাই সকাল থেকেই চট্টগ্রাম ড্রাইডক এনসিটির অপারেশন পরিচালনা শুরু করবে। এর মধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে ড্রাইডক নিজস্ব জনবল নিয়োগ করবে। তবে চাইলে সাইফ পাওয়ারটেকের কিছু অভিজ্ঞ কর্মীকেও তারা অর্ন্তভুক্ত করতে পারবে। এই বিষয়ে সম্পূর্ণ সিদ্ধান্ত থাকবে চট্টগ্রাম ড্রাইডকের হাতে।
প্রসঙ্গত, এনসিটি চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে ব্যস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ কনটেইনার টার্মিনাল। এখানে প্রতিদিন গড়ে ১০ হাজারের বেশি কনটেইনার ওঠানামা করে। টার্মিনালটিতে একসঙ্গে চারটি বড় জাহাজ ভেড়াতে পারে এবং এটি দেশের সামুদ্রিক পণ্য আমদানি–রপ্তানিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
২০০৭ সালে চুক্তির ভিত্তিতে এনসিটি পরিচালনার দায়িত্ব পায় বেসরকারি অপারেটর সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড। প্রায় দেড় দশক ধরে তারা বন্দর কর্তৃপক্ষের অধীনে এনসিটির ক্রেন অপারেশন, কার্গো হ্যান্ডলিং, কনটেইনার স্থানান্তরসহ অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। তবে এবার নতুন নীতিমালার আলোকে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকেই দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
চট্টগ্রাম ড্রাইডক লিমিটেড মূলত নৌবাহিনী নিয়ন্ত্রিত একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান, যা বিভিন্ন সময় জাহাজ নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও সামুদ্রিক প্রকৌশল ক্ষেত্রে কাজ করেছে। এবার তারা বাণিজ্যিক কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের মতো একটি স্পর্শকাতর দায়িত্ব নিচ্ছে, যা তাদের সক্ষমতা পরীক্ষার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বন্দর সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলছেন, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে ড্রাইডকের অংশগ্রহণ অপারেশনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়াতে পারে। তবে একযোগে এতবড় অপারেশন পরিচালনার বাস্তব সক্ষমতা এবং জনবল ব্যবস্থাপনার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
অবশ্য , অপারেশনাল কার্যক্রমে কোনো ধরনের বিঘ্ন এড়াতে বেসরকারি অপারেটর প্রতিষ্ঠানসাইফ পাওয়ারটেক জানিয়েছে, তারা সর্বাত্মক সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত।
সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার রুহুল আমিন মঙ্গলবার বিষয়টি খোলাসা করেছেন সংবাদমাধ্যমের কাছে। তিনি উল্লেখ করেন, ‘ যে কোনো কারণেই হোক এনসিটির অপারেশন কার্যক্রম ১ মিনিটের জন্যও বাধাগ্রস্ত হবে না। এ বিষয়ে আমাদের পক্ষ থেকে কর্তৃপক্ষকে নিশ্চয়তা দিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, এনসিটিতে প্রতিষ্ঠানটির বিপুল আর্থিক ও প্রযুক্তিগত বিনিয়োগ রয়েছে, যার একটি বড় অংশ এখনো কার্যকর। তাদের মালিকানাধীন বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, যানবাহন ও সফটওয়্যার অবকাঠামো ব্যবহারের বিষয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলমান রয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, এনসিটিতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম সাইফপাওয়ারটেকের তত্ত্বাবধানে থাকায় সেগুলো বুঝে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি চিঠি প্রতিষ্ঠানটিকে ইতোমধ্যেই পাঠানো হয়েছে, যাতে হস্তান্তরের বিষয়টি দ্রুত সম্পন্ন করা যায়।