Home জাতীয়  এনসিপি: এককভাবে নির্বাচনে লড়ার প্রস্তুতি, ঢাকার কেন্দ্রে প্রার্থী তরুণ নেতৃত্ব

 এনসিপি: এককভাবে নির্বাচনে লড়ার প্রস্তুতি, ঢাকার কেন্দ্রে প্রার্থী তরুণ নেতৃত্ব

ছবি এ আই
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) পুরোদমে নির্বাচনি মাঠে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছে। ২৪-এর জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের হাত ধরে গঠিত এই দল এককভাবে নির্বাচনে লড়ার প্রস্তুতি নিয়েছে, যা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এনসিপির শীর্ষ নেতারা ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ আসনগুলো থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পরিকল্পনা করছেন, একইসঙ্গে তারা পুরনো দলগুলোর প্রতি জনগণের অনীহার সুযোগ কাজে লাগাতে বদ্ধপরিকর।

নির্বাচনী রণনীতি ও প্রার্থী তালিকা:
এনসিপি সূত্রে জানা যায়, দলটি ইতোমধ্যে ঢাকাসহ অন্তত ১৭০টি আসনে দলীয় প্রার্থীর একটি খসড়া তালিকা তৈরি করেছে। এই আসনগুলোতে তারা নিবিড়ভাবে কাজ করছে। দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা ঢাকায় বেশ কয়েকটি আসনে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। কেউ কেউ নিজ নিজ এলাকায় ভোটের অনানুষ্ঠানিক প্রচারও শুরু করেছেন।

দলের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এনসিপির আহ্বায়ক ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানে একদফার ঘোষক নাহিদ ইসলাম রাজধানীর সবুজবাগ-মতিঝিল ও ডেমরা এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-৯ অথবা ১১ আসন থেকে লড়বেন। দলের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক এবং রাজনৈতিক লিয়াজোঁ কমিটির প্রধান আরিফুল ইসলাম আদিব মিরপুর এলাকার একটি আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। চিকিৎসক ডা. তাসনিম জারা ঢাকা-৩ (কেরানীগঞ্জ) আসন থেকে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে দলের যুগ্ম সদস্য সচিব আকরাম হোসেন ও ঢাকা জেলার প্রধান সমন্বয়কারী রাসেল আহম্মেদ, ঢাকা-৭ থেকে আরিফ ও সোহেল, ঢাকা-৪ ও ৫ থেকে এসএম শাহরিয়ার ও নিজাম উদ্দিন, ঢাকা-১৭ থেকে আলাউদ্দিন মোহাম্মদ, এবং উত্তরা থেকে দলের মুখ্য সমন্বয়কারী নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এছাড়া, ঢাকা-১৯ থেকে যুগ্ম সদস্য সচিব ফয়সাল মাহমুদ শান্ত, ঢাকা-২০ থেকে আসাদুল ইসলাম মুকুল এবং ঢাকা-৬ থেকে কেন্দ্রীয় সদস্য খান মো. মোরসালিন লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত। দলের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক সামান্থা শারমিন ও সিনিয়র যুগ্ম সচিব নাহিদা সারোয়ার নিভা ঢাকা ও আশপাশের এলাকা থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

ঢাকার বাইরেও দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা বিভিন্ন আসনে প্রার্থী হচ্ছেন। সদস্য সচিব আখতার হোসেন রংপুর, সারজিস আলম পঞ্চগড় এবং হাসনাত আবদুল্লাহ কুমিল্লা থেকে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন। এনসিপির উপদেষ্টা পরিষদে থাকা দুই ছাত্রনেতা যদি দলে যোগ দেন, তবে তাদের জন্য দলীয় পদ এবং সংসদীয় আসনের বিষয়টিও চূড়ান্ত করে রাখা হয়েছে।

এককভাবে নির্বাচন ও জোটের প্রস্তাব:
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের রাজনৈতিক দল হিসেবে এনসিপি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবে অংশ নিতে যাচ্ছে। দলের শীর্ষপর্যায় থেকে তৃণমূলে এ বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্তটি তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ দলটিকে নিজেদের নির্বাচনি জোটে পেতে বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী উভয়ই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। উভয় দল থেকে বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধিরা পর্দার আড়ালে এনসিপির সঙ্গে নিবিড় আলোচনা অব্যাহত রেখেছেন বলে জানা গেছে। তবে এনসিপি আপাতত জোটের পরিবর্তে নিজেদের শক্তিতে বিশ্বাসী।

পুরোনো দলগুলোর প্রতি অনীহা কাজে লাগানোর লক্ষ্য:
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন, “পুরোনো দলগুলোর প্রতি জনগণের অনীহা রয়েছে।” তার এই বক্তব্য ইঙ্গিত দেয় যে, এনসিপি দেশের প্রচলিত রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি ভোটারদের বিদ্যমান অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের একটি স্বতন্ত্র অবস্থান তৈরি করতে চাইছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনমনে যে পরিবর্তন ও নতুনত্বের আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে, এনসিপি তাকে নির্বাচনি সাফল্যে রূপান্তরিত করার চেষ্টা করবে।

বিশ্লেষণ:
জুলাই আন্দোলনের মাধ্যমে একটি শক্তিশালী ছাত্র ও তরুণ সমাজের উত্থান ঘটেছিল, যার ধারাবাহিকতায় এনসিপির মতো একটি রাজনৈতিক দলের জন্ম। তাদের এককভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত একদিকে যেমন তাদের আত্মবিশ্বাস ও স্বাধীনচেতা মনোভাবের পরিচায়ক, তেমনই অন্যদিকে এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জও বটে। প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যাপক সাংগঠনিক শক্তি ও সম্পদ না থাকা সত্ত্বেও, এনসিপির তরুণ নেতৃত্ব এবং জনগণের মধ্যে সৃষ্ট নতুনত্বের আকাঙ্ক্ষা তাদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে ঢাকার মতো শহুরে এবং শিক্ষিত ভোটারদের কাছে তারা নতুন বিকল্প হিসেবে উপস্থাপিত হতে চাইছে।

বিএনপি ও জামায়াতের মতো প্রধান দলগুলোর এনসিপিকে জোটে টানার চেষ্টা এটাই প্রমাণ করে যে, জুলাই আন্দোলনের এই নতুন রাজনৈতিক শক্তির একটি নির্দিষ্ট প্রভাব রয়েছে। তবে, জোট থেকে দূরে থেকে এককভাবে কতটা সফলতা অর্জন করতে পারবে, তা সময়সাপেক্ষ। এনসিপির এই স্বতন্ত্র পথচলা বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘমেয়াদে কী প্রভাব ফেলবে, তা দেখার জন্য আরও অপেক্ষা করতে হবে।