Home স্বাস্থ্য পিসিওএস ও এন্ডোমেট্রিওসিস: নীরব যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে থাকা

পিসিওএস ও এন্ডোমেট্রিওসিস: নীরব যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে থাকা

হেলথ ডেস্ক: ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন ২২ বছরের রিফা। প্রতিমাসে মাসিকের সময় অসহনীয় ব্যথায় কুঁকড়ে যান তিনি। অনেক সময় ক্লাস করতে পারেন না, পরীক্ষাও মিস হয়। চিকিৎসকের কাছে গেলে বলা হয়, তার এন্ডোমেট্রিওসিস রয়েছে। আরেক বন্ধু আয়শা ভুগছে পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (পিসিওএস)-এ—মাসিক অনিয়ম, হরমোন ভারসাম্যহীনতা, মুখে ব্রণ, ওজন বেড়ে যাওয়া ও হতাশা তার জীবনের নিত্যসঙ্গী।

এই দুটি রোগ বর্তমানে তরুণ নারীদের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু এর কষ্টের চেহারা বাইরে থেকে বোঝা যায় না। তাই এই যন্ত্রণার নাম “নীরব রোগ”।

পিসিওএস কী?

পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS) হলো হরমোনজনিত একটি সমস্যা, যাতে ডিম্বাশয়ে ছোট ছোট সিস্ট তৈরি হয় এবং মাসিক চক্র অনিয়মিত হয়ে পড়ে। এটি প্রজনন ক্ষমতায় প্রভাব ফেলে, ওজন বাড়ায়, ত্বকে সমস্যা তৈরি করে এবং মানসিক চাপ বাড়ায়।

এন্ডোমেট্রিওসিস কী?

এন্ডোমেট্রিওসিসে জরায়ুর ভেতরের টিস্যু জরায়ুর বাইরে গিয়ে বৃদ্ধি পায়, যার ফলে তীব্র ব্যথা, অতিরিক্ত রক্তপাত, এবং বন্ধ্যত্বের ঝুঁকি তৈরি হয়। অনেক নারী এটি বুঝতেই পারেন না, কারণ তারা মাসিকের ব্যথাকে ‘স্বাভাবিক’ ধরে নেন।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই রোগ কতটা মারাত্মক?

বাংলাদেশে সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও চিকিৎসকরা বলছেন, নগরাঞ্চলের ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে অন্তত ১ জন প্রতি ৫ জনে এই দুই রোগের একটিতে আক্রান্ত। কিন্তু সচেতনতা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং চিকিৎসার অভাবে অনেকেই জানতে পারেন না।

নীরব যন্ত্রণা: মানসিক চাপ ও হীনমন্যতা

এই রোগ শুধু শারীরিক নয়—মানসিকভাবেও কুঁড়ে কুঁড়ে খায়। মাসিক অনিয়মের কারণে অনেকে মনে করেন, তারা মা হতে পারবেন না। কেউ কেউ সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার ভয় পান। ত্বকে ব্রণ, চুল পড়া, ওজন বাড়া—এসব কারণে আত্মবিশ্বাসও ভেঙে পড়ে। বিষণ্ণতা, উদ্বেগ এবং নিজের শরীর নিয়ে ঘৃণা তৈরি হয়।

চিকিৎসা আছে, কিন্তু সচেতনতা কম

দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা, খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত ব্যায়াম এই রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখে। তবে সমস্যার মূল জায়গা হলো—নারীরা এটি নিয়েও লজ্জায় চুপ থাকেন। অনেকে বলতেই চান না, কারণ “মাসিক” বা “প্রজনন” বিষয় নিয়ে কথা বলাকে এখনো সমাজে নিষিদ্ধ ভাবা হয়।

সমাধান কী?

স্বাস্থ্য শিক্ষা পাঠ্যক্রমে PCOS ও এন্ডোমেট্রিওসিস নিয়ে অধ্যায় থাকা দরকার। কর্মজীবী নারীদের জন্য হেলথ চেকআপ ও কাউন্সেলিং সেবা থাকা উচিত। পরিবারে, বন্ধুবান্ধবের মধ্যে এই রোগ নিয়ে কথা বলা সহজ ও নিরাপদ করতে হবে।

📣 পাঠকের প্রতি আহ্বান

আপনি কি নিজে বা পরিচিত কেউ এই রোগে ভুগছেন? তার অভিজ্ঞতা আমাদের জানাতে পারেন। প্রতিবেদনটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে শেয়ার করুন, মতামত লিখুন কমেন্টে।