এভিয়েশন ডেস্ক:
ভারতের গুজরাটের আহমেদাবাদ থেকে উড্ডয়নের পর মাত্র এক মিনিটের মাথায় ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট এআই১৭১। আগুনের গোলায় রূপ নেওয়া বিমানটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। এখনও পর্যন্ত প্রকৃত কারণ নির্ধারণে সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। তবে ইতোমধ্যেই বিশেষজ্ঞরা সম্ভাব্য কয়েকটি কারণ সামনে এনেছেন।
বিমানের ফ্ল্যাপ ত্রুটি ও ল্যান্ডিং গিয়ার
দুর্ঘটনার আগে পাওয়া ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিমানের উইং ফ্ল্যাপ সম্পূর্ণরূপে গুটানো ছিল—যা স্বাভাবিক উড্ডয়নের জন্য অস্বাভাবিক। ফ্ল্যাপস বিমানের ডানার আকৃতি পরিবর্তনের মাধ্যমে বাড়তি উত্তোলন ক্ষমতা প্রদান করে। কিন্তু সম্পূর্ণ গুটানো অবস্থায় উড্ডয়ন করলে পর্যাপ্ত লিফট পাওয়া যায় না। একইসঙ্গে দেখা যায়, বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ারও সম্পূর্ণভাবে গুটানো হয়নি, যা বাড়তি রোধ তৈরি করতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, সম্ভবত ল্যান্ডিং গিয়ারে কোনো সমস্যা দেখা দেওয়ায় পাইলটেরা ফ্ল্যাপ আংশিকভাবে গুটিয়ে টান কমাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এতে বিমানটি উত্তোলন হারিয়ে ফেলে এবং ধাক্কা খায়।
বার্ড স্ট্রাইক: দু’টি ইঞ্জিন নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা
আরেকটি বড় সম্ভাবনা হচ্ছে বার্ড স্ট্রাইক বা পাখির আঘাত। আহমেদাবাদ বিমানবন্দর শহরের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় অবস্থিত এবং অতীতে এটির বার্ড স্ট্রাইকের জন্য কুখ্যাতি রয়েছে। ২০২৩ সালে এখানে ৮১টি বার্ড স্ট্রাইকের রিপোর্ট রয়েছে, যা দিল্লির পরেই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দু’টি ইঞ্জিনেই একসঙ্গে বার্ড স্ট্রাইক ঘটলে বিমানটি ইঞ্জিন শক্তি হারিয়ে পড়ে যেতে পারে। স্বাভাবিকভাবে একটি ইঞ্জিন নষ্ট হলেও আধুনিক ৭৮৭-৮ বিমানে উড্ডয়ন সম্ভব। তবে একসঙ্গে দুই ইঞ্জিন ব্যর্থ হলে বিমানের নিয়ন্ত্রণ রক্ষা করা অসম্ভব হয়ে পড়ে।
পাইলটের ভুল সিদ্ধান্ত
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এআই১৭১ বিমানের পাইলটেরা রানওয়ের সম্পূর্ণ দৈর্ঘ্য না নিয়ে মাঝপথ থেকে উড্ডয়ন শুরু করেন। ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়, প্রায় পূর্ণ ক্ষমতায় লোডেড বিমানের জন্য অন্তত ২৫০০ মিটার রানওয়ে প্রয়োজন হয়। কিন্তু এই বিমানের ব্যবহার করা রানওয়ে ছিল ২০০০ মিটারেরও কম। এতে প্রয়োজনীয় গতি ও লিফট অর্জনে বিমান হিমশিম খেতে পারে।
প্রযুক্তিগত ত্রুটি বা ইঞ্জিন ব্যর্থতা
বোয়িং ৭৮৭-৮ হলো আধুনিক এবং উচ্চমানের প্রযুক্তিনির্ভর একটি বিমান, যার অতীতে বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনার ইতিহাস নেই। তবে প্রযুক্তিগত বা যান্ত্রিক ত্রুটি হঠাৎ করে ঘটলে এমন বিপর্যয় ঘটতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ত্রুটির সম্ভাবনা কম, তবে একে পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
ওভারলোডিং বা অতিরিক্ত ওজন
বিমানটি প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ওজন বহন করছিল কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে এটি নিয়মিতভাবে পরীক্ষা করা হয় এবং অতিরিক্ত জ্বালানির কারণে উড্ডয়নে সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা খুবই কম।
বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক জন ম্যাকডারমিড বলেন, “ফ্লাইটের সবচেয়ে বিপজ্জনক দুটি অংশ হলো উড্ডয়ন ও অবতরণ। তবে এত কম উচ্চতায় এত দ্রুত দুর্ঘটনা ঘটাটা অত্যন্ত বিস্ময়কর।”
প্রাথমিক অনুসন্ধানের ভিত্তিতে সম্ভাব্য কারণসমূহ:
- ফ্ল্যাপ বা ল্যান্ডিং গিয়ার ত্রুটি
- বার্ড স্ট্রাইক ও ইঞ্জিন ব্যর্থতা
- রানওয়ের অপূর্ণ ব্যবহার
- অতিরিক্ত গরম আবহাওয়ায় পর্যাপ্ত গতি অর্জনে ব্যর্থতা
- সম্ভাব্য মানবিক ভুল
- প্রযুক্তিগত ত্রুটি
সম্পূর্ণ তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত নিশ্চিত কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে বর্তমান তথ্যের ভিত্তিতে এই কারণগুলিই বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিতে সম্ভাব্য হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।