Home Third Lead খুলনায় ছাত্র-জনতার বিক্ষোভে গ্রেপ্তার বিতর্কিত এসআই সুকান্ত দাস

খুলনায় ছাত্র-জনতার বিক্ষোভে গ্রেপ্তার বিতর্কিত এসআই সুকান্ত দাস

সুকান্ত কুমার দাস

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, খুলনা: ছাত্র-জনতার লাগাতার আন্দোলন ও বিক্ষোভের মুখে অবশেষে গ্রেপ্তার করা হয়েছে পুলিশের বিতর্কিত উপপরিদর্শক (এসআই) সুকান্ত কুমার দাসকে। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) সকালে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা থেকে খুলনা মহানগর পুলিশ (কেএমপি) ও চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের একটি যৌথ দল তাঁকে গ্রেপ্তার করে।

সুকান্ত দাসের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই ছাত্র ও সাধারণ জনগণের ওপর দমন-পীড়নের অভিযোগ ছিল। বিশেষ করে গত বছরের ‘জুলাই অভ্যুত্থান’-এর সময় খুলনায় ছাত্র-জনতার ওপর নিপীড়ন, বিক্ষোভ দমন ও নির্বিচারে গ্রেপ্তারের ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়। এর পরপরই তাঁকে খুলনা থেকে সরিয়ে ঢাকায় এবং পরে চুয়াডাঙ্গায় বদলি করা হয়।

কেএমপি কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার গণমাধ্যমকে জানান, খুলনা সদর থানায় বিএনপি নেতা শফিকুল আলম মনার বাড়ি ভাঙচুরের মামলায় সুকান্ত দাসকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেন, “সরকারি কর্মচারী গ্রেপ্তারের নির্ধারিত প্রক্রিয়া রয়েছে, তা অনুসরণ করেই তাকে আটক করা হয়েছে। আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।”

এর আগে, গত মঙ্গলবার (২৪ জুন) খুলনার খানজাহান আলী থানা এলাকায় স্থানীয় জনগণ ও বিএনপি নেতাকর্মীরা সুকান্ত দাসকে সনাক্ত করে আটকে রাখেন এবং মারধর শেষে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন। তবে রাতেই তাঁকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। এতে ক্ষোভে ফেটে পড়ে বিভিন্ন সংগঠন। পরদিন বুধবার দুপুর থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’, ছাত্রদল ও এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের কর্মীরা কেএমপি সদর দপ্তর ঘেরাও করে বিক্ষোভ শুরু করেন।

বিক্ষোভকারীরা প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে দেন এবং ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে সুকান্তের গ্রেপ্তার দাবি করেন। রাত সাড়ে ৯টায় ছাত্ররা সরে গেলে পুলিশ ফটকের তালা খুলে বাইরে আসে।

বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, “সুকান্ত দাসের মতো একজন বিতর্কিত ও নির্যাতনকারী পুলিশ সদস্যকে চিহ্নিত করার পরও ছেড়ে দেওয়া গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। আমরা কেবল তার গ্রেপ্তার নয়, পুলিশ কমিশনারের অপসারণও চাই।”

বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ দ্বিতীয় দিনে গড়ালে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। কেএমপি সদর দপ্তরের সামনে অবস্থান নেওয়া বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা সড়কে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ চালিয়ে যান। এক দফা দাবি হিসেবে তাঁরা জোরালোভাবে কেএমপি কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দারের পদত্যাগ দাবি করছেন।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এসআই সুকান্ত দাসের বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের ১২ ডিসেম্বর খুলনা সদর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছিল। তাতে ছাত্র ও জনতার ওপর হামলা এবং ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ রয়েছে। মামলাটি তদন্ত করছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে আরও দুটি মামলা রয়েছে।

খুলনায় এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে পুলিশের ভূমিকা, নিরপেক্ষতা এবং জবাবদিহি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। পরিস্থিতি শান্ত করতে প্রশাসন সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছে বলে জানা গেছে।