বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে ব্যাংক খাতে বৃহৎ লুটপাটের অভিযোগে একাধিক তদন্ত চালাচ্ছে। মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুদক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় সংস্থাটির মহাপরিচালক আক্তার হোসেন জানান, চারটি ব্যাংক থেকে এস আলম গ্রুপ ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ১ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছে। তিনি জানান, অভিযোগগুলো পর্যায়ক্রমে যাচাই-বাছাই করে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে এবং অভিযুক্তদের দেশে ফেরাতে ইন্টারপোলের সহায়তা নেওয়া হচ্ছে।
দুদক তথ্য অনুযায়ী, ইসলামী ব্যাংক থেকে ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক থেকে ১৩ হাজার কোটি টাকা, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে ৩৯ হাজার কোটি টাকা এবং ইউনিয়ন ব্যাংক থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা লুটপাটের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এসব তথ্য বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) থেকে প্রাপ্ত নথি বিশ্লেষণের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে। এই লুটপাটের ঘটনায় দুদকের একাধিক টিম ও টাস্কফোর্স কাজ করছে।
গণঅভ্যুত্থানের পর থেকেই এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে ব্যাংক দখল ও ঋণ লুটপাটের অভিযোগগুলো দুদকে জমা হতে থাকে। অভিযোগ অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি ব্যাংক ঋণের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে দেশের আর্থিক খাতকে ভঙ্গুর অবস্থায় ফেলেছে। দুদক এই ঘটনার অনুসন্ধান করছে এবং গ্রুপের নিয়ন্ত্রণাধীন ব্যাংকগুলোতে লুটপাটের ঘটনা বের করতে তৎপর রয়েছে।
মহাপরিচালক আক্তার হোসেন আরও জানান, দেশে ফেরাতে ইন্টারপোলের মাধ্যমে অভিযুক্তদের সন্ধান চালানো হচ্ছে। একই সঙ্গে অন্য আর্থিক অনিয়মের মামলায়, ভোলা-২ আসনের সাবেক এমপি আলী আজম মুকুল ও তার স্ত্রী এবং সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট শামসুর রহমানের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করা হয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই ঘটনা কেবল একটি সংস্থার আর্থিক অনিয়ম নয়, বরং দেশের ব্যাংকিং খাতের দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার কার্যকারিতা পরীক্ষা করছে। এস আলম গ্রুপের মতো বড় প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংক ঋণ ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধা গ্রহণের সময় সরকারি তদারকি এড়িয়ে যেতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে এটি দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও ব্যাংকিং খাতের বিশ্বাসযোগ্যতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
দুদকের উদ্যোগ আন্তর্জাতিক সহযোগিতার দিকে ইঙ্গিত করছে। ইন্টারপোলের সহায়তা নেওয়া মানে অভিযুক্তরা বিদেশে থাকলেও তাদের দেশে ফেরিয়ে দ্রুত ও বৈধভাবে আদালতের মুখোমুখি করানো হবে। এটি দেশের আইনি ব্যবস্থার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও কার্যকারিতার প্রতি আস্থা বাড়ানোর দিকেও ইঙ্গিত দেয়।
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, শুধু অভিযুক্তদের দণ্ডিত করা যথেষ্ট নয়। ব্যাংকিং খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও তদারকি প্রক্রিয়া শক্তিশালী করা, আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং স্বয়ংক্রিয় তদারকি, ঋণ যাচাই প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও বড় প্রতিষ্ঠানের সময়োপযোগী অডিট কার্যকর করা অত্যাবশ্যক।
শেষ পর্যন্ত, এস আলম গ্রুপের মামলা কেবল একটি আইনি ঘটনা নয়; এটি দেশের আর্থিক ব্যবস্থার দক্ষতা, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও স্বচ্ছতার পরীক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। দুদকের উদ্যোগ সফল হলে তা দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার সক্ষমতা প্রদর্শনের পাশাপাশি ভবিষ্যতে আর্থিক অনিয়ম কমানোর ক্ষেত্রে দিকনির্দেশক হবে।