Home স্বাস্থ্য সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি হতে পারে এই একটাই ব্যায়াম

সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি হতে পারে এই একটাই ব্যায়াম

ছবি সংগৃহীত

হেলথ ডেস্ক:

বয়সের সঙ্গে সঙ্গে শরীরের নমনীয়তা, শক্তি ও ভারসাম্য কমে আসাটা খুবই স্বাভাবিক। তবে একেবারে সহজ অথচ উপযোগী একটি ব্যায়াম এই ধীর ক্ষয়কে ঠেকিয়ে দিতে পারে ওয়াকিং লাঞ্জ। যাঁরা এখনো জিমে যাওয়া শুরু করেননি, তাঁদের জন্যও এটি হতে পারে চমৎকার একটি স্টার্টার এক্সারসাইজ। কেননা ওয়াকিং লাঞ্জ করতে না লাগে কোনো যন্ত্র, না লাগে বাড়তি অভিজ্ঞতা।

অনেকেই শরীরচর্চা বলতে বোঝেন পুশআপ, স্কোয়াট বা ভারোত্তোলনের মতো ‘দেখতে ভালো’ ব্যায়াম। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, ওয়াকিং লাঞ্জ চেহারা বদলানোর চেয়ে অনেক বেশি উপকার করে শরীরের গভীরে। শক্তি, ভারসাম্য, মোবিলিটি—সব একসঙ্গে গড়ে তোলে এই অনাড়ম্বর ব্যায়াম।

লাঞ্জ কি শুধু পায়ের ব্যায়াম?

না, এটি মূলত একটি ফুল-বডি ওয়ার্কআউট। প্রতিটি ধাপে পায়ের বড় মাংসপেশির পাশাপাশি পেট ও কোমরের পেশিও কাজ করে। পা সামনে এগিয়ে নেওয়ার সময় পায়ের পেশি যেমন সচল হয়, তেমনি ভারসাম্য ধরে রাখার জন্য সক্রিয় হয় মূল কেন্দ্রের পেশিগুলো।

বিশেষজ্ঞ জেনি টারডিফ বলেন, “ওয়াকিং লাঞ্জ এমন এক ব্যায়াম যা চলার মতোই প্রাকৃতিক। এটি শরীরকে নিচ থেকে উঠে দাঁড়াতে শেখায় যেটা বয়স্কদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।” টারডিফের এক ক্লায়েন্ট আগে মেঝে থেকে উঠে দাঁড়াতে পারতেন না, কিন্তু লাঞ্জ চর্চা করে সে সীমাবদ্ধতা দূর করতে পেরেছেন।

কেন লাঞ্জ এত গুরুত্বপূর্ণ?

পার্সোনাল ট্রেইনার জেক ডিয়ারডেন বলেন, “ওয়াকিং লাঞ্জ শক্তি, ভারসাম্য, নমনীয়তা ও স্থিতিশীলতা—সব একসঙ্গে বাড়ায়। বয়স্কদের ক্ষেত্রে এগুলোই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয়।”

আরও চমকপ্রদ ব্যাপার হলো, এটি শরীরের অসামঞ্জস্যতা শনাক্ত করতে সাহায্য করে। কারণ লাঞ্জে দুই পা আলাদাভাবে কাজ করে, ফলে দুর্বলতা বা ভারসাম্যের ঘাটতি সহজেই ধরা পড়ে।

কীভাবে করবেন ওয়াকিং লাঞ্জ

১. পায়ের অবস্থান ঠিক রাখুন: দুই পা যেন ট্রেন লাইনের দুই রেল লাইনের মতো থাকে। একটানা সোজা লাইনে হাঁটলে ভারসাম্য হারাবেন।

২. স্টেপের দৈর্ঘ্য নির্ধারণ করুন: বেশি দূর হাঁটলে গ্লুটস বা নিতম্বের পেশি, কম হাঁটলে থাইয়ের পেশি বেশি কাজ করে।

৩. পেছনের হাঁটু নিয়ন্ত্রণে রাখুন: হাঁটু যেন মাটি ছুঁয়ে যায়, তবে ধাক্কা খেয়ে নয়—নরম ছোঁয়া যেন হয়।

৪. পায়ের আঙুলে ভারসাম্য দিন: বড় ও ছোট আঙুল দিয়ে মাটিতে চাপ দিয়ে হাঁটুন, না হলে হাঁটু ভিতরের দিকে মোচড় খাবে।

৫. গতি নিয়ন্ত্রণ করুন: এক থেকে দুই সেকেন্ডে পা এগিয়ে, একই সময়ে পেছনের হাঁটু নামান, তারপর মাটি ঠেলে উঠে আসুন।

৬. শুরু করুন রিভার্স লাঞ্জ দিয়ে: একেবারে নতুন হলে পেছনের দিকে পা বাড়িয়ে লাঞ্জ দিয়ে শুরু করুন।

৭. ধীরে ধীরে ওজন যোগ করুন: শরীরের ওজনেই শুরু করে পরে হাতে ডাম্বেল নিয়ে চর্চা করুন। বয়স বাড়লে পেশি হারানো ঠেকাতে ওজন জরুরি।

৮. রিপেটিশন নিয়ন্ত্রণ করুন: নতুনদের জন্য এক পায়ে ১২-১৫ বার করে দুই থেকে তিন সেট। ওজন নিলে ছয় থেকে দশবারই যথেষ্ট।

বিকল্প লাঞ্জগুলো কী কী?

• কাঁধে স্যান্ডব্যাগ নিয়ে হাইরক্স স্টাইলের লাঞ্জ
• পেছনের পায়ে ক্রস করে করা ‘কার্টেসি লাঞ্জ’—গ্লুটস ফোকাসড
• মেডিসিন বল নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে করা কোর ফোকাসড লাঞ্জ

স্কোয়াট না লাঞ্জ—কোনটা ভালো?

শক্তি বাড়ানোর ক্ষেত্রে স্কোয়াট এগিয়ে, কিন্তু ভারসাম্য ও দৈনন্দিন চলাফেরার উপযোগীতা বিবেচনায় লাঞ্জ অনেক এগিয়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দুটোই রুটিনে রাখাই হবে সেরা সিদ্ধান্ত।

বয়স বাড়লেও যদি ফিট থাকতে চান, নীরব কিন্তু শক্তিশালী এই ব্যায়ামটিকে সহজভাবে শুরু করে নিন। ওয়াকিং লাঞ্জ আপনার দৈহিক সক্ষমতা ধরে রাখবে বহুদিন।