বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম বন্দরে বাণিজ্যিক জাহাজে বাধ্যতামূলকভাবে বেসরকারি ওয়াচম্যান নিয়োগ, তাদের দৈনিক মজুরি বৃদ্ধি এবং জাহাজ ছাড়পত্রের (এনওসি) পূর্বে ওয়াচম্যান বুকিং সেলের প্রত্যয়নপত্র বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস্ এসোসিয়েশন (বিএসএএ)। সংগঠনটি এই সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক ও দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে জানিয়েছে।
২৮ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে বিএসএএ উল্লেখ করেছে যে, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক) এর পরিচালক (নিরাপত্তা) কর্তৃক গত ১৮ আগস্ট ২০২৫ তারিখে জারিকৃত এক নির্দেশনার মাধ্যমে চবক ওয়াচম্যানদের দৈনিক মজুরি ৬০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০০০ টাকা করা হয়েছে। একইসাথে, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখ থেকে সব বাণিজ্যিক জাহাজের জন্য চবক নিবন্ধিত বেসরকারি ওয়াচম্যান নিয়োগ এবং তাদের বুকিং সেল থেকে প্রত্যয়নপত্র গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়। বিএসএএ-এর মতে, এই সিদ্ধান্ত শিপিং এজেন্টদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং তাদের যৌক্তিক মতামত উপেক্ষা করা হয়েছে।
বিএসএএ যুক্তি দেখিয়েছে যে, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে চট্টগ্রাম বন্দরের নিরাপত্তা স্তর (Security Level-1) সন্তোষজনক। বন্দরের নিজস্ব নিরাপত্তা বিভাগ, কোস্ট গার্ড, বাংলাদেশ নৌ পুলিশ, কাস্টমস কর্মকর্তা এবং নিবন্ধিত শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর ও জাহাজের ক্রু সদস্যরা সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকেন। ফলে, আলাদা বেসরকারি ওয়াচম্যান নিয়োগের কোনো প্রয়োজন নেই।
সংগঠনটি আরও জানিয়েছে যে, চবক ওয়াচম্যান বুকিং সেলের মাধ্যমে নিয়োজিত বেসরকারি ওয়াচম্যানদের মজুরি ঐতিহ্যবাহী ভেন্ডরদের মাধ্যমে নিয়োজিত ওয়াচম্যানদের তুলনায় ৩-৪ গুণ বেশি। কারণ ভেন্ডররা ওয়াচম্যানদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে, যা চবকের ওয়াচম্যানদের ক্ষেত্রে শিপিং এজেন্টদের বহন করতে হয় এবং এক্ষেত্রে প্রতিদিন ওয়াচম্যান প্রতি ১০-১৫ ডলার অতিরিক্ত ব্যয় হয়। অনেক জাহাজের মালিক নিজেদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিজেরাই নিশ্চিত করেন এবং অতিরিক্ত ওয়াচম্যানের ব্যয়ভার বহন করতে চান না। বিশেষ করে, ১-১.৫ মাস বহিঃনোঙরে থাকা কার্গো জাহাজগুলোর ক্ষেত্রে এই ব্যয়ভার জাহাজ ভাড়া বৃদ্ধি করে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
বিএসএএ সতর্ক করেছে যে, ওয়াচম্যান খাতের এই মজুরি বৃদ্ধি বিদেশি প্রিন্সিপ্যালদের ওপর আর্থিক বোঝা বাড়াবে, যা দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে এবং চূড়ান্তভাবে ভোক্তাদের ওপর বর্তাবে। তারা আরও উল্লেখ করেছে যে, আন্তর্জাতিক মেরিটাইম অর্গানাইজেশন (IMO) কনভেনশনে বন্দরে ওয়াচম্যান নিয়োগের কোনো বাধ্যতামূলক বিধান নেই এবং বিশ্বের অন্য কোনো বন্দরেও এমন ব্যবস্থা চালু নেই।
সংগঠনটি বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছে যে, মজুরি বৃদ্ধি এবং বাধ্যতামূলক প্রত্যয়নপত্রের শর্ত প্রত্যাহার করা হোক। যদি বন্দরের নিরাপত্তা আরও বাড়ানোর প্রয়োজন হয়, তবে তা প্রশিক্ষিত সরকারি বাহিনী দ্বারা নিশ্চিত করা উচিত এবং গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে বন্দরের ট্যারিফে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত, যা স্বচ্ছতা ও বিদেশি প্রিন্সিপ্যালদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। বিএসএএ আশা করছে, এই দীর্ঘদিনের সমস্যা সমাধানের জন্য বন্দর প্রশাসন কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, যাতে চট্টগ্রাম বন্দরের সুনাম ও দেশের বৈদেশিক বাণিজ্য অক্ষুণ্ণ থাকে।