বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: নগরীর ব্যস্ততম এবং গুরুত্বপূর্ণ সড়ক জাকির হোসেন রোডে ১২ দিন ধরে ফেটে থাকা ওয়াসার পাইপ থেকে প্রতিনিয়ত অপচয় হচ্ছে সুপেয় পানি। সরকারি মহিলা কলেজ ও লায়ন হাসপাতালের মধ্যবর্তী অংশে থাকা পাইপের ফাটল দিয়ে দিনরাত প্রবল গতিতে বেরিয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার গ্যালন পানি। এতে একদিকে যেমন রাস্তাটি ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে আশপাশের এলাকাগুলোর পানির সরবরাহে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ সংকট।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাস্তার একাংশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে কাদা ও পানির স্রোত। ফাটা পাইপ দিয়ে ছিটকে আসা পানিতে রাস্তার পিচ উঠে গিয়ে তৈরি হয়েছে ছোট-বড় খানাখন্দ। ওইসব জায়গা দিয়ে চলাচল করছে গাড়ি, রিকশা, মোটরসাইকেল, এমনকি পথচারীদেরও হাঁটতে হচ্ছে খুবই সতর্কভাবে।
পথচারী রাশেদা বেগম, যিনি নিয়মিত এই রাস্তা দিয়ে হাসপাতাল আসেন, ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা যারা পায়ে হেঁটে চলি, তাদের অবস্থা সবচেয়ে করুণ। কাদা-মাটিতে পা পিছলে পড়ে যাওয়ার ভয় থাকে সবসময়। আর সন্ধ্যার পর তো পানি ছিটকে জামাকাপড় ভিজে যায়।”
একই সুরে কথা বলেন সিএনজি চালক নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, “দিনে চার-পাঁচবার এই রাস্তা দিয়ে যাই। রাস্তাটা এখন এমন অবস্থায় গেছে যে গাড়ির চাকা পড়ে গিয়ে অনেক সময় ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। আর পিছনের গাড়ির সাথে ধাক্কা লাগার ভয় থাকে। যাত্রীদেরও কষ্ট হয়।”
এই পাইপ ফাটার কারণে আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদের বাসায় পর্যাপ্ত পানি পৌঁছাচ্ছে না। স্থানীয় বাসিন্দা মো. মাহবুব বলেন, “প্রতিদিন পানির জন্য সংগ্রাম করতে হয়। ওয়াসার অফিসে ফোন করে জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনো সমাধান আসে না। বাধ্য হয়ে টাকা দিয়ে পানি আনতে হচ্ছে। এটা একটা দুঃসহ অভিজ্ঞতা।”
ওয়াসার সাথে যোগাযোগ করে জানা যায়, তারা বিষয়টি জানার পর মোবাইল টিম পাঠিয়েছে এবং তারা দু’বার গিয়ে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছে। কিন্তু রাস্তার মাঝখানে পাইপ মেরামতের জন্য দীর্ঘ সময় যান চলাচল বন্ধ রাখতে হবে, এজন্য ট্রাফিক বিভাগ অনুমতি দেয়নি। ভয়াবহ যানজটের আশঙ্কায় কাজ আটকে আছে।
ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, “আমরা জনস্বার্থেই কাজ করতে দিচ্ছি না। এই রাস্তাটি নগরীর অন্যতম ব্যস্ত রুট। দিনে মেরামতের কাজ করলে পুরো এলাকা অচল হয়ে যাবে। তবে রাতের বেলা বা ছুটির দিনে যদি পরিকল্পনা করে কাজ শুরু করে, তাহলে সহায়তা করা সম্ভব।”
এদিকে স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তাদের মতে, একদিকে হাজার হাজার লিটার পানি নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে মানুষ পানির জন্য হাহাকার করছে এটি অগ্রহণযোগ্য। তারা অবিলম্বে রাতের বেলায় আংশিক সড়ক অবরোধ করে হলেও মেরামতের কাজ শুরুর দাবি জানিয়েছেন।
এই সমস্যার দ্রুত সমাধান না হলে শুধুমাত্র রাস্তাটিরই নয়, নিচের পাইপলাইন সিস্টেমেরও বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রকৌশলীরা।