বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিং কার্যক্রম ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও গত বছরের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়ে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। চলতি অর্থবছরের ১৫ জুন পর্যন্ত বন্দরে মোট ৩১ লাখ ১১ হাজার ৭৯৯ টিইইউস কনটেইনার হ্যান্ডলিং সম্পন্ন হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪.৬৩ শতাংশ বেশি।
বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, গত জুলাই মাসে গণঅভ্যুত্থান, দীর্ঘস্থায়ী বন্যা, দুই ঈদের দীর্ঘ ছুটি, কাস্টমস কলম বিরতি এবং পরিবহন ধর্মঘটের মতো জটিল চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও তারা সফলভাবে বন্দর কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছে। এসব বাধা অতিক্রম করে বন্দরের হ্যান্ডেলিং পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের গতিপ্রকৃতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট ৩১ লাখ ৬৮ হাজার ৬৯০ টিইইউস কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরের ৩০ লাখ ৭ হাজার ৩৭৫ টিইইউস থেকে স্পষ্ট উন্নতি। চলতি অর্থবছরের শেষ ১৫ দিন এখনও বাকি থাকলেও গত অর্থবছরের মোট কনটেইনার হ্যান্ডলিংকে ছাড়িয়ে যাওয়ায় ৩০ জুনের মধ্যে নতুন রেকর্ড স্পর্শ করার ব্যাপারে আশাবাদী কর্তৃপক্ষ।
বন্দর আধুনিকায়নে অগ্রগতি এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের ফলে এই সাফল্য এসেছে। বিশেষ করে বন্দর কর্তৃপক্ষের অটোমেশন সার্ভিস চালু করা, ই-গেট পাস সিস্টেম বাস্তবায়ন এবং কনটেইনার অপারেটিং সিস্টেমের আধুনিকায়ন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। এর ফলে বন্দরের কার্যক্রম আরও দ্রুত ও স্বচ্ছ হয়ে উঠেছে, যেটি বাণিজ্যিক পণ্যের সঠিক ও সময়মত সরবরাহ নিশ্চিত করতে সহায়ক।
চট্টগ্রাম বন্দর দেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবাহকেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে। বন্দর কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র বলেন, “আমরা বন্দর পরিচালনায় প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে ঝুঁকি ও অসুবিধা কমিয়ে ব্যবসায়িক কার্যক্রমকে গতিশীল করার দিকে কাজ করছি। এই ধরণের সাফল্য দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন উদ্যম যোগাবে এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে দেশের অবস্থান আরও সুদৃঢ় করবে।”
চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর হওয়ায় এর কার্যক্রম দেশের ব্যবসায়িক পরিবেশের গতিপ্রবাহে সরাসরি প্রভাব ফেলে। তাই বন্দরের কার্যকর ও আধুনিক ব্যবস্থাপনা দেশের রপ্তানি-আমদানির উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
সংক্ষেপে:
- ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১৫ জুন পর্যন্ত ৩১ লাখ ১১ হাজার ৭৯৯ টিইইউস হ্যান্ডেলিং হয়েছে।
- গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বৃদ্ধি ৪.৬৩ শতাংশ।
- ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট ৩১ লাখ ৬৮ হাজার ৬৯০ টিইইউস হ্যান্ডেলিং হয়েছে।
- চলতি অর্থবছরে শেষ ১৫ দিন বাকি থাকা সত্ত্বেও পুরনো রেকর্ড ছাড়িয়েছে।
- গণঅভ্যুত্থান, বন্যা, ছুটি, কাস্টমস বিরতি, পরিবহন ধর্মঘটসহ নানা প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে সাফল্য অর্জন।
- অটোমেশন, ই-গেট পাস, আধুনিক অপারেটিং সিস্টেমের মাধ্যমে কার্যক্রম গতিশীলকরণ।
- বন্দর উন্নয়নে কাজ করে দেশের ব্যবসায়িক পরিবেশে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
চট্টগ্রামের অগ্রগতির মধ্যেই প্রতিবেশী বন্দরগুলোয় দৃষ্টিনন্দন প্রবৃদ্ধি
২০২৪-২৫ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। তবে এই সময়কালে প্রতিবেশী দেশগুলোও তাদের গুরুত্বপূর্ণ বন্দরগুলোতে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে চোখে পড়ার মতো প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে প্রতিযোগিতার চিত্রকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে।
ভারতের বিভিন্ন প্রধান বন্দর ২০২৪-২৫ অর্থবছরে গড়ে ১০ শতাংশ হারে কনটেইনার হ্যান্ডলিং বৃদ্ধি করেছে। এ সময়ে দেশটির মোট কার্গো হ্যান্ডলিং দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮৫৫ মিলিয়ন টনে, যা আগের বছরের তুলনায় ৪ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি। ভারতের এই প্রবৃদ্ধি সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনে তাদের সক্ষমতা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রতিফলন।
অন্যদিকে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ বন্দর সিঙ্গাপুরেও গত এক বছরে উল্লেখযোগ্য উন্নতি লক্ষ্য করা গেছে। পোর্ট সিংগাপুর অথরিটি এবং জুরং পোর্টের সম্মিলিত হিসাব অনুযায়ী, ২০২৫ সালের প্রথম চার মাসেই কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে ৬ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে, যা ২০২৪ সালের একই সময়ের তুলনায় বেশি।
মালয়েশিয়ার পোর্ট ক্লাংও উল্লেখযোগ্য রেকর্ড গড়েছে। ২০২৪ সালে বন্দরটি ১৪ দশমিক ৬৪ মিলিয়ন টিইইউস কনটেইনার হ্যান্ডলিং করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৪ দশমিক ১ শতাংশ বেশি। এটি মালয়েশিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি হ্যান্ডলিংয়ের রেকর্ড।
শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দর ২০২৪ সালে ৭ দশমিক ৮ মিলিয়ন টিইইউস কনটেইনার হ্যান্ডল করেছে, যেখানে প্রবৃদ্ধির হার ২৩ শতাংশ। এই তীব্র প্রবৃদ্ধির পেছনে মূলত ট্রান্সশিপমেন্ট কার্যক্রমে ৯ দশমিক ৭ শতাংশ বৃদ্ধি মুখ্য ভূমিকা রেখেছে।
এই তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে তাদের কার্যক্রম আরও বিস্তৃত করছে। ফলে আঞ্চলিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ও সক্ষমতা বজায় রাখতে হলে চট্টগ্রাম বন্দরের আধুনিকায়ন, জাহাজ আগমনের গতি, ট্রান্সশিপমেন্ট নীতিতে সংস্কার এবং কার্গো পরিচালনায় প্রযুক্তি ব্যবহারের মতো উদ্যোগ আরও জোরদার করতে হবে।