Home অন্যান্য রক্তাক্ত ইতিহাস ও সংস্কৃতির মিশেল: জানুন কম্বোডিয়াকে

রক্তাক্ত ইতিহাস ও সংস্কৃতির মিশেল: জানুন কম্বোডিয়াকে

রাষ্ট্রপরিচিতি: কম্বোডিয়া

রক্তাক্ত ইতিহাস আর শিল্পসৌন্দর্যের মিশেল একসঙ্গে ধারণ করে আছে কম্বোডিয়া। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির নাম শুনলেই মনে পড়ে যায় বিশ্বের অন্যতম মহৎ স্থাপত্য নিদর্শন অ্যাংকর ওয়াতের কথা। হাজার বছরের পুরোনো মন্দির ও ভাস্কর্যের আভিজাত্য এখনো বিস্ময়ে ভরিয়ে রাখে ভ্রমণকারীদের হৃদয়। তবে এই ঐশ্বর্যশালী সংস্কৃতির আড়ালে লুকিয়ে আছে ভয়াবহ গণহত্যার ইতিহাস, যা পুরো জাতিকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল।

অ্যাংকর সাম্রাজ্যের উত্থানকাল ছিল নবম শতক থেকে চতুর্দশ শতক। ভারতীয় সভ্যতা ও বৌদ্ধধর্মের প্রভাবে গড়ে ওঠা ভাস্কর্য, নৃত্য ও মন্দিরনির্ভর সংস্কৃতি কম্বোডিয়ার পরিচিতি এনে দিয়েছিল বিশ্বে। সেই সময়ের শিল্পকলা ও স্থাপত্য আজও কম্বোডিয়ার মানুষের গর্ব। কিন্তু কয়েক শতাব্দীর পতনের পর দেশটি ঔপনিবেশিক শাসন, যুদ্ধ এবং রাজনৈতিক অস্থিরতায় নিমজ্জিত হয়।

কম্বোডিয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অবস্থিত একটি রাষ্ট্র, যার পূর্বে ভিয়েতনাম, পশ্চিমে থাইল্যান্ড, উত্তরে লাওস এবং দক্ষিণে থাইল্যান্ড উপসাগর। এক সময় এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী সাম্রাজ্য ‘খমের সাম্রাজ্য’-এর কেন্দ্র ছিল, যার স্থাপত্য নিদর্শন আজও অ্যাংকর ওয়াট মন্দিরে দৃশ্যমান।

রাজধানী ও প্রধান শহর:
রাজধানী শহর প্নম পেন, যা দেশের সবচেয়ে বড় শহর ও অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।

জনসংখ্যা ও ভাষা:
কম্বোডিয়ার জনসংখ্যা প্রায় ১৭ মিলিয়ন। প্রধান ভাষা খমের, যা দেশটির সরকারি ভাষা। অধিকাংশ মানুষ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী।

শাসনব্যবস্থা:
কম্বোডিয়া একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্র, যার রাষ্ট্রপ্রধান হচ্ছেন রাজা এবং সরকার প্রধান হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। তবে দেশটির রাজনৈতিক ব্যবস্থা দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতাসীন হুন সেনের দল দ্বারা প্রভাবিত।

অর্থনীতি:
কম্বোডিয়ার অর্থনীতি কৃষিনির্ভর হলেও সাম্প্রতিক সময়ে পোশাক শিল্প, পর্যটন ও নির্মাণ খাত দ্রুত বিকাশ লাভ করছে। বিশেষ করে অ্যাংকর ওয়াটকে ঘিরে দেশটির পর্যটন খাত বিশ্বব্যাপী পরিচিত। চীন, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম তাদের প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার।

ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়:
কম্বোডিয়ার ইতিহাসের এক ভয়াবহ অধ্যায় ছিল ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত খমের রুজ শাসনামল। পল পটের নেতৃত্বাধীন এই কমিউনিস্ট সরকার লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করে। দেশটির সাম্প্রতিক রাজনীতি ও সমাজব্যবস্থায় এই রক্তাক্ত ইতিহাস এখনও প্রভাব ফেলে।

সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য:
খমের সংস্কৃতি হাজার বছরের পুরনো। ধর্মীয় নৃত্য, ঐতিহ্যবাহী সংগীত ও মন্দিরনির্মাণ কম্বোডিয়ার সাংস্কৃতিক পরিচয় গড়ে তুলেছে। অ্যাংকর ওয়াট বিশ্বের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় স্থাপনা এবং ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক:
কম্বোডিয়া আসিয়ান (ASEAN)-এর সদস্য এবং চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের বিনিয়োগ দেশটির পরিকাঠামো উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখছে।

সংক্ষেপে বলা যায়, ঐতিহ্য, ইতিহাস ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ হলেও কম্বোডিয়া এখনও দারিদ্র্য, দুর্নীতি ও গণতন্ত্র সংকটে জর্জরিত। তবুও পর্যটন ও উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে দেশটি এগিয়ে চলেছে আধুনিকতার পথে।