চিটাগাং চেম্বারে প্রাক-বাজেট মতবিনিময় সভা:
১৫ লাখ কারদাতার রাজস্বে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব নয়
এনবিআরকে অটোমেশন করা হচ্ছে: চেয়ারম্যান
শেয়ার বাজার ধ্বংস হয়ে গেছে: মেট্রোচেম্বার সভাপতি
চট্টগ্রাম: ২০২৫-২০২৬ অর্থ বছরের জাতীয় বাজেট প্রণয়নের প্রাক্কালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোঃ আবদুর রহমান খান এফসিএমএ চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি এর সদস্য ও অত্র অঞ্চলের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সাথে ১০ এপ্রিল সকালে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারস্থ কনফারেন্স হলে এক প্রাক-বাজেট মতবিনিময় সভায় মিলিত হন।
এ সময় তিনি বলেন- এবারের বাজেট হবে ব্যবসাবান্ধব বাজেট। বাজেটকে জনবান্ধব করতে ব্যবসায়ীসহ সকলের মতামত নেয়া হচ্ছে। যার প্রতিফলন পাওয়া যাবে বাজেটে। আগামী বাজেটে ঘাটতি থাকবে কিন্তু যাতে মূল্যস্ফীতি না হয় সেই দিকেও লক্ষ্য রাখা হবে। আর রাজস্ব আদায়ে যৌক্তিকভাবে বাড়ানো হবে করহারও।
তিনি বলেন- গত অর্থ বছরে ৪৫ লাখ করদাতা আয়কর রিটার্ন দাখিল করে। যার মধ্যে ৩০ লাখ করদাতা শূন্য রিটার্নধারী। বাকী ১৫ লাখ কারদাতা থেকে রাজস্ব আদায় করা হয়েছে। এত কম সংখ্যক লোকের থেকে রাজস্ব আদায়ের মাধ্যমে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব নয়। এনবিআর জরিপ করে যারা রিটার্ন দিচ্ছে না তাদের নোটিশ দেয়া হচ্ছে। পরবর্তীতে তাদের ব্যাংক হিসেব তলব করা হবে।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশের ট্যাক্স টু জিডিপি রেশিও খুবই কম। তাই করহার বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই। এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন-মার্কিন শুল্ক আরোপের ফলে দেশের পোশাকখাত যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য সরকার আন্তরিকতার সাথে কাজ করছে। এছাড়া ব্যবসায়ীরা যাতে এনবিআর অফিসে ঘুরতে না হয় সেজন্য সবকিছু অটোমেশন করা হচ্ছে। এখন সিঙ্গেল উইন্ডোর মাধ্যমে এক লাখ ৬০ হাজার সার্টিফিকেট অনলাইনে প্রদান করা হয়েছে।
চেয়ারম্যান মোঃ আবদুর রহমান খান বলেন, ভ্যাট এবং বন্ড সুবিধা নিয়ে অনেক অভিযোগ রয়েছে। আমরা বন্ড সুবিধা অটোমেশনের আওতায় আনতে কাজ করছি। এছাড়া আয়করের মতো ভ্যাটও যেন ঘরে বসে দেয়া যায় সেই ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। তিনি আগামী বাজেটে ভ্যাট হার যৌক্তিকীকরণ এবং ব্যবসায়ীদের ব্যবসার ট্যাক্স রেট কমানো, ট্যাক্সনেট বৃদ্ধি ও রিফান্ড ব্যবস্থা আধুনিকায়ন করা হবে বলে তিনি জানান ।
সভায় স্বাগত বক্তব্যে চিটাগাং চেম্বার প্রশাসক মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা বলেন-নোবেল বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুস এর থ্রি জিরো থিওরি বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব হলে বাংলাদেশও সত্যিকারের একটি কল্যাণমূলক ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত হবে। তিনি আরও বলেন- এলডিসি থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশ বিশ্ববাজারে অনেক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে পারে, তবে, নতুন সম্ভাবনার দ্বারও উন্মোচিত হবে। এজন্য আমাদেরকে সম্মিলিতভাবে বিকল্প উপায় বের করতে হবে। আমদানি পর্যায়ে করহার পুনর্বিন্যাস, কিংবা দেশীয় শিল্প সুরক্ষার জন্য নানাবিধ প্রণোদনার বিকল্প উপায় বের করতে হবে। ট্যাক্স সিস্টেমের সময়োপযোগী সংস্কারের মাধ্যমে ট্যাক্স জিডিপি অনুপাতও কাঙ্খিত মাত্রায় উন্নীত করার আহবান জানান। চেম্বার প্রশাসক সাধারণ করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে ৪ লক্ষ টাকায় উন্নীত করা সময়ের দাবী উল্লেখ করে পরবর্তী ধাপগুলো পুনর্বটন করার মাধ্যমে মধ্যম আয়ের করদাতাদের মুদ্রাস্ফীতিজনিত চাপ সহনীয় এবং ব্যক্তিগত ট্যাক্স লায়বিলিটি কমিয়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি করদাতাদের রিটার্নে উৎসাহিত করা গেলে করদাতার সংখ্যা যেমন বাড়বে তেমনি রাজস্ব আয়ও বাড়বে বলে উল্লেখ করেন। তিনি চিটাগাং চেম্বারের পক্ষ থেকে আয়কর বিষয়ক ১৯টি, ভ্যাট বিষয়ক ৪০টি ও শুল্ক বিষয়ক ৫৫টি প্রস্তাবনা এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে হস্তান্তর করেন।
মেট্রোপলিটন চেম্বার সভাপতি খলিলুর রহমান বলেন-শেয়ার বাজার ধ্বংস হয়ে গেছে। শেয়ারের উপর ৪০% এবং ডিভিডেন্ডের উপর ২৫% দিলে কী থাকে উদ্যোক্তাদের। তিনি এই করহার কমানো এবং প্রাইভেট কোম্পানীগুলোর করহার কমানোরও আহবান জানান।
উইমেন চেম্বারের সভাপতি আবিদা মোস্তফা বলেন-দেশের এসএমই খাতের ভূমিকা রাখছে নারী উদ্যোক্তারা। তাই আগামী বাজেটে নারী উদ্যোক্তাদের এসএমই খাতে সুযোগ সুবিধার বাড়ানোর আহবান জানান তিনি।
অন্যান্য বক্তারা এইচএস কোড জটিলতা নিরসন, ছোটখাট ও অনিচ্ছাকৃত ভুলত্রুটির কারণে ২০০-৪০০% কাস্টমস জরিমানা আরোপ না করা, আগাম করের ক্ষেত্রে দ্রুত রিফান্ড, অডিট সহজীকরণ, সর্বোচ্চ ভ্যাট হার সিঙ্গেল ডিজিটে নিয়ে আসা, ভ্যাটের প্রথম আপীলের ক্ষেত্রেও দাবীকৃত করের উপর ২০% টাকা জমা দেয়ার নিয়ম প্রত্যাহার করা এবং দেশীয় উৎপাদনমূখী শিল্পকে সুরক্ষা ও প্রণোদনা, চট্টগ্রাম কাস্টমস এর জনবল ও ল্যাব এবং প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধি, ডাবল ট্যাক্সেশন কমানো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের অডিটের আওতার বাইরে রাখা এবং সেন্ট্রাল বন্ড সিস্টেম চালু করার প্রস্তাব উত্থাপন করেন।
সভায় চেম্বার প্রশাসক মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা এর সভাপতিত্বে মেট্রোপলিটন চেম্বারের সভাপতি খলিলুর রহমান, উইমেন চেম্বারের সভাপতি আবিদা মোস্তফা, চিটাগাং চেম্বারের প্রাক্তন সভাপতি ও সংসদ সদস্য সরওয়ার জামাল নিজাম, প্রাক্তন সিনিয়র সহ-সভাপতি এরশাদ উল্লাহ, প্রাক্তন সহ-সভাপতি বেলাল আহমেদ, চেম্বার পরিচালক ও বিজিএমইএ এর ১ম সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী, চিটাগাং চেম্বারের সাবেক পরিচালক হাসানুজ্জামান চৌধুরী (জোসেফ) ও আমজাদ হোসেন চৌধুরী, পান রপ্তানিকারক এসোসিয়েশন এর সভাপতি মোঃ একরামুল করিম চৌধুরী, কক্সবাজার চেম্বার সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী (খোকা), রাঙ্গামাটি চেম্বার সভাপতি মোহাম্মদ মামুনুর রশিদ মামুন, চট্টগ্রাম ট্যাক্সেস বার এসোসিয়েশন এর সভাপতি মোঃ আবু তাহের, চট্টগ্রাম কাস্টমস এজেন্টস এসোসিয়েশন এর সাধারণ সম্পাদক মোঃ শওকত আলী, চট্টগ্রাম ফ্রেশ ফ্রুটস ভেজিট্যাবলস এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন এর সভাপতি মাহবুব রানা, বাংলাদেশ ফার্ণিচার শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি মাকসুদুর রহমান, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি সালেহ আহমেদ সুলেমান, ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট এন্ড বিজনেসেস ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন এর এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারী কামরুল হুদা, চট্টগ্রাম গার্মেন্টস এক্সেসরিজ এসোসিয়েশন এর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন, বিএসআরএম জিএম শেখর রঞ্জন কর ও সিটি কর্পোরেশন এর কর্মকর্তা সাব্বির আহমেদ শামীম প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
সভায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য এ কে এম বদিউল আলম, চেম্বারের সাবেক পরিচালক কামাল মোস্তফা চৌধুরী ও জহিরুল ইসলাম চৌধুরী (আলমগীর), পার্ক শিপিং লাইন এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ হুমায়ুন কবির পাটোয়ারী, টি.কে. গ্রুপের এডভাইজর জাফর আলম, লুব-রেফ’র এমডি মোহাম্মদ ইউসুফ, এইচআরসি’র সিনিয়র পরিচালক কাজী রুকুনউদ্দীন আহমেদ, খাগড়াছড়ি চেম্বার পরিচালক নজরুল ইসলাম, টেরীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবদুল মান্নান, বিকেএমইএ এর পরিচালক ফৌজুল ইমরান খানসহ কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর বিভাগের কমিশনারবৃন্দ, ফল ব্যবসায়ী সমিতি, বিপিজিএমইএ, রিহ্যাবসহ বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী নেতৃবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
-সংবাদ বিজ্ঞপ্তি