আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পাকিস্তানের বৃহত্তম নগরী করাচি প্রবল মৌসুমি বৃষ্টিতে কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। টানা বর্ষণে শহরের বিভিন্ন সড়ক নদীর মতো রূপ নিয়েছে, বন্ধ হয়ে গেছে যান চলাচল, বিপর্যস্ত হয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ।
করাচি ট্রাফিক পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, এমএ জিন্নাহ রোড, আইআই চুন্ড্রিগড় রোড, বাহাদুরাবাদ, ন্যাশনাল হাইওয়ে সহ নগরীর বিভিন্ন প্রধান সড়ক তলিয়ে গেছে। যানজট সৃষ্টি হওয়ায় যাত্রীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকা পড়েছেন। জরুরি প্রয়োজনে গাড়ি চালাতে হলেও চালকদের গতি কমিয়ে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে আহ্বান জানিয়েছে ট্রাফিক পুলিশ।
সিন্ধু প্রদেশের চিফ সেক্রেটারি আসিফ হায়দার শাহ সব জরুরি সেবা সংস্থাকে—রেসকিউ ১১২২ ও প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষসহ—সতর্ক অবস্থায় থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি দ্রুত পানি নিষ্কাশন কার্যক্রম শুরু করতে এবং জেলা প্রশাসকদের সরাসরি মাঠে থেকে তদারকি করতে নির্দেশ দেন।
আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, নাজিমাবাদে ৭৬.৯ মিমি, নর্থ করাচিতে ৫৬.৮ মিমি এবং সুরজানি টাউনে ৩৬ মিমি বৃষ্টি রেকর্ড হয়েছে। করাচির বেশ কিছু এলাকায় একই ধরনের বৃষ্টিপাত হয়েছে। নিচু এলাকা প্লাবিত হওয়ায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে কেএ-ইলেকট্রিক সাময়িকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। এতে উদ্ধার ও পানি নিষ্কাশন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
করাচি মেট্রোপলিটন করপোরেশন নগরীতে বৃষ্টিজনিত জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। সব সরকারি কর্মীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। ফায়ার ব্রিগেড, আরবান সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ এবং পৌরসভার কর্মীরা টানা কাজ করছেন।
পূর্ব জোন পুলিশও সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। তারা পানি নিষ্কাশন, নিরাপত্তা এবং যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। নগরবাসীকে বৈদ্যুতিক তার থেকে দূরে থাকা, পানিবন্দি সড়ক এড়িয়ে চলা এবং যেকোনো বিপদে দ্রুত জরুরি নম্বরে যোগাযোগ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এদিকে, আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বর্ষণ এখনো থামার সম্ভাবনা নেই। ২২ আগস্ট পর্যন্ত করাচি, ঠাট্টা, বাদিনসহ সিন্ধুর বিভিন্ন এলাকায় ভারী বৃষ্টি ও আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। এমনকি কিছু এলাকায় ভূমিধস ও মারাত্মক নগর বন্যার ঝুঁকিও রয়েছে।
নগরজুড়ে বিশৃঙ্খলা ও দুর্ভোগের মধ্যেই করাচির মানুষ আরও বৃষ্টির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন—যদিও মৌসুমি বৃষ্টি পানির জন্য প্রয়োজনীয়, তবে অনিয়ন্ত্রিত বর্ষণ ভয়াবহ নগর বন্যা ও জনজীবনে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।