যোগাযোগ বিপর্যয়, সাতজন নিহত
কৃষ্ণা বসু, কলকাতা: রাতভর আর ভোরে মুষলধারে ঢলে পড়া বৃষ্টিতে কলকাতার বড় অংশ জলমগ্ন হয়ে পড়েছে এবং শহরের খুব বড় একাংশে নৈমিত্তিক জীবন স্তব্ধ। ট্রাফিক, লোকাল ট্রেন ও মেট্রো পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে; বিমান সংস্থাগুলোও ভ্রমণ সতর্কতা জারি করেছে। বিভিন্ন পুলিশ ও প্রশাসনিক সূত্রে অন্তত সাতজন বৃষ্টিতে ঘটিত বিদ্যুৎ সংস্পর্শের কারণে প্রাণ হারিয়েছেন।
কী ঘটেছে, পরিসংখ্যান ও কারণ
আলিপুর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে একদিনে রেকর্ড মাত্রার বৃষ্টি নথিভুক্ত হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় আলিপুরে প্রায় ২৪৭.৪ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়া দফতাগুলি বলছে বঙ্গোপসাগরে তৈরি নিম্নচাপ ও দক্ষিণ-পশ্চিম বাতাসের আর্দ্র সঞ্চালনই এই অতিরিক্ত বর্ষণের প্রধান কারণ। আগামী কয়েক দিনে একই ধরনের অস্থির আবহাওয়া বিরাজ করতে পারে।

কোন কোন এলাকায় প্রভাব বেশি
উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতা-সহ শহরের নীচু ভূপ্রদেশগুলো এই বৃষ্টিতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জাদবপুর, বাগহাজতিন, সল্ট লেকে, গলফ গ্রিন, কলেজ স্ট্রিট, আমহার্স্ট স্ট্রিট, ঠনঠনিয়া অঞ্চলে রাস্তা-ঘাট পানিতে ভরে গেছে; অনেক ক্ষেত্রে হাঁটু–বাঁধক স্তরেরও বেশি জল জমেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় জলাবদ্ধতার ভিডিও ও ছবি ভাইরাল হয়েছে।
নিহত ও আহত, কীভাবে ঘটল
বন্যা-পরিস্থিতিতে ডুবে থাকা বৈদ্যুতিক কেবলের সংস্পর্শে পড়ে কিংবা জলাশয়ে বিদ্যুৎসংযোগের কারণে অন্তত সাতজনের মৃত্যু হয়েছে; বিভিন্ন হাসপাতালেও কয়েকজন আহত হয়েছে। রাজ্য প্রশাসন ও পৌর কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি দ্রুত সমাধানের নির্দেশ দিয়েছে।

যোগাযোগ ব্যবস্থা ও জনজীবনে প্রভাব
মেট্রো ও লোকাল ট্রেন: জলাবদ্ধতার কারণে শহরের মেট্রো পরিষেবা কিছু অংশে সীমিত এবং লোকাল ট্রেন পরিষেবায় বিলম্ব–বাতিল হয়েছে।
বাস ও সিটি ট্রাফিক: বহু জায়গায় চাপের মধ্যে পড়েছে।
বিমান ও ভ্রমণ সতর্কতা: কিছু বিমান সংস্থা যাত্রীদের সতর্ক করেছে।
শিক্ষা ও অনুষ্ঠান: শহরের কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে এবং গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে।
প্রশাসনিক ও উদ্ধার কাজ
কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন জরুরি পাম্প চালু করে রাস্তা পরিষ্কার করার উদ্যোগ নিয়েছে; পুলিশের টিম এবং কর্পোরেশনের ইঞ্জিনিয়ররা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় উদ্ধার ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা করছেন। মুখ্যমন্ত্রী পরিস্থিতি “রেকর্ড স্তরের” বলে অভিহিত করে সংশ্লিষ্ট দফতিগুলিকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
জনস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা পরামর্শ
সরকারি সূত্র এবং জরুরি পরিষেবাগুলি বলছে, পানিতে ভিজা এলাকায় কেউ আউটডোরে বের না হন; জলজ অঞ্চলে বৈদ্যুতিক বস্তু স্পর্শ করা যাবে না; জরুরি অবস্থায় ১০০/১০১/১০৯০ নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
পরিস্থিতির ভবিষ্যৎ
বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপের কারণে আগামী ২–৩ দিনে একই ধরনের বৃষ্টিপাতের ঝুঁকি রয়েছে; সমুদ্র-জোয়ারের সময় জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি বাড়তে পারে। প্রশাসন এবং জরুরি সেবাকারীরা প্রস্তুত অবস্থায় রয়েছেন।
রাতভর ও ভোরে মুষলধারে বৃষ্টিতে কোলকাতা শহর ব্যাপক জলাবদ্ধতার শিকার, যোগাযোগ বাধাগ্রস্ত, দৈনন্দিন জীবন বিপর্যস্ত এবং কয়েকজনের প্রাণহানিও ঘটেছে। প্রশাসন জরুরি পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং আবহাওয়া সতর্কতা জারি করেছে।