হেলথ ডেস্ক:
অনেকেই পনির, ডিম কিংবা শুঁটকি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলেন শুধুমাত্র একটি ভয়ের কারণে—রক্তে খারাপ কলেস্টেরল বাড়বে। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, এই ভয় হয়তো অতিরঞ্জিত।
ব্রিটিশ ডায়েটিক অ্যাসোসিয়েশনের ডায়েটিশিয়ান ড. ডুয়েন মেলর বলছেন, সব স্যাচুরেটেড ফ্যাট (সন্তৃপ্ত চর্বি) এক নয়। বিশেষ করে গরু-ভেড়া জাতীয় তৃণভোজী প্রাণীর দুধজাত পণ্যে থাকা অদ্ভুত-চেইন ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়, বরং উপকারীও হতে পারে।
কলেস্টেরল আসলে কী?
এটি রক্তে থাকা একধরনের মোমজাত পদার্থ, যা শরীরে হরমোন তৈরি, কোষ গঠন ও কোষ ঝিল্লি রক্ষণাবেক্ষণে ভূমিকা রাখে। প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ কলেস্টেরল শরীর নিজেই তৈরি করে, বাকিটা আসে খাদ্য থেকে।
কলেস্টেরলের দুই প্রধান ধরন:
HDL (ভালো কলেস্টেরল): রক্তে থাকা কলেস্টেরল সরিয়ে লিভারে নিয়ে যায় এবং তা শরীর থেকে বের করে দেয়।
LDL (খারাপ কলেস্টেরল): কলেস্টেরলকে রক্তনালিতে জমিয়ে ব্লক তৈরি করে।
রক্তে উচ্চ ট্রাইগ্লিসারাইডও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এটি মূলত অতিরিক্ত ক্যালোরি জমিয়ে রাখার মাধ্যম, যা হয় অতিরিক্ত চর্বি, চিনি বা মদ্যপান থেকে।
ভুলভাবে খারাপ ভাবা হয়েছিল যে খাবারগুলো:
১. পনির
বহুদিন ধরে মনে করা হচ্ছিল পনিরে থাকা স্যাচুরেটেড ফ্যাট এলডিএল বাড়ায়। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, এতে থাকা উপকারী ব্যাকটেরিয়া ও পুষ্টি উপাদান এটির নেতিবাচক প্রভাবকে কমিয়ে দেয়।
২. ডিম
ডিমে কলেস্টেরল থাকলেও এটি শরীরে খারাপ প্রভাব ফেলে না। কারণ ডিমে স্যাচুরেটেড ফ্যাট কম এবং প্রোটিন বেশি, যা হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী।
৩. শুঁটকি ও সামুদ্রিক মাছ
শুঁটকি বা ঝিনুকজাতীয় খাবারে থাকা কলেস্টেরল মানবদেহে খুব একটা প্রভাব ফেলে না। তবে তেলে ভাজা হলে ক্ষতি হতে পারে।
যেসব খাবার সত্যিই কলেস্টেরল কমাতে সহায়ক:
১. বেগুন
বেগুনে থাকা আঁশ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট (নাসুনিন) এলডিএল শোষণ রোধ করে এবং তা মলমূত্রের মাধ্যমে বের করে দেয়।
২. ঢেঁড়স
ঢেঁড়সে থাকা মিউসিলেজ নামের এক ধরনের জেল কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার পাশাপাশি চর্বি ও কলেস্টেরলকে শরীর থেকে বের করে দিতে সাহায্য করে।
৩. মসুর ডাল
মসুর ডাল উচ্চ আঁশ ও আয়রনে সমৃদ্ধ। এতে থাকা ফাইবার রক্তে কলেস্টেরল শোষণ কমায় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
৪. বাদাম ও বীজ
আখরোট, কাজু, পেস্তা ও চিয়া বীজে থাকা ভালো চর্বি ও প্লান্ট স্টেরলস খারাপ কলেস্টেরল কমায়। তবে লবণযুক্ত ভাজা বাদাম এড়িয়ে চলা উচিত।
৫. ওটস ও বার্লি
ওটসে থাকা বেটা-গ্লুকান অন্ত্রে একধরনের জেল তৈরি করে, যা কলেস্টেরল শোষণ কমিয়ে দেয়।
৬. তোফু (সয়াবিন পনির)
তোফুতে থাকা ফাইটোইস্ট্রোজেন চর্বি শোষণ রোধ করে এবং হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক।
৭. তেলযুক্ত মাছ
সালমন, সারডিন, ম্যাকারেল ইত্যাদিতে থাকা ওমেগা-৩ চর্বি ট্রাইগ্লিসারাইড কমায় এবং ভালো কলেস্টেরল বাড়ায়।
৮. সবুজ শাকসবজি ও ব্রকোলি
ব্রাসিকা গোত্রের শাকসবজিতে থাকা আঁশ ও গ্লুকোরাফানিন শরীরে প্লাজমা এলডিএল কমাতে সহায়ক। পালং শাক, ব্রাসেলস স্প্রাউটও উপকারী।
সব চর্বি খারাপ নয়। বরং সঠিক খাদ্য নির্বাচন, নিয়ন্ত্রিত ক্যালোরি গ্রহণ, এবং আঁশযুক্ত খাবার খাওয়ার মাধ্যমে রক্তে খারাপ কলেস্টেরল কমানো সম্ভব। আর কিছু পুষ্টিকর খাবার যেমন পনির বা ডিম যে এতদিন ভীতির কারণ ছিল, তারা আজ নতুন আলোকে মূল্যায়িত।