হেলথ ডেস্ক: নতুন গবেষণায় উঠে এসেছে, রক্তে অতিরিক্ত কলেস্টেরল শুধু হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের জন্য নয়, ডিমেনশিয়ার ঝুঁকিও বাড়ায়। যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ায় অনুষ্ঠিত আলঝেইমারস অ্যাসোসিয়েশন ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সে এ তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কলেস্টেরল এখন আনুষ্ঠানিকভাবে ১৪টি পরিবর্তনযোগ্য ডিমেনশিয়া ঝুঁকির একটি হিসেবে স্বীকৃত। ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশনের সিনিয়র নার্স জুলি ওয়ার্ড একে “নীরব ঘাতক” বলে উল্লেখ করেছেন, কারণ উপসর্গ না থাকলেও বিপদ লুকিয়ে থাকে।
কলেস্টেরল কী?
এটি এক ধরনের চর্বিজাত পদার্থ, যা শরীরের কোষ গঠনে, হরমোন তৈরিতে ও স্নায়ু সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। লিভার থেকেই এটি প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হয়।
কলেস্টেরলের দুটি প্রধান ধরন রয়েছে:
- LDL (খারাপ কলেস্টেরল): রক্তনালিতে জমে গিয়ে ব্লক তৈরি করে।
- HDL (ভালো কলেস্টেরল): রক্তনালিকে পরিষ্কার রাখতে সহায়ক।
এলডিএল বেশি হলে রক্তপ্রবাহ ব্যাহত হয়, যার ফলে মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ কমে গিয়ে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বাড়ে। যদিও এইচডিএল উপকারী, কিন্তু ওষুধ দিয়ে HDL বাড়ালেও হৃদরোগের ঝুঁকি কমে এমন নিশ্চিত প্রমাণ নেই।
আপনি কিভাবে বুঝবেন আপনার কলেস্টেরল বেশি?
অধিকাংশ ক্ষেত্রে লক্ষণ প্রকাশ পায় না। তবে কিছু দৃশ্যমান সংকেত হতে পারে যেমন:
- আঙুল, হাঁটু বা গোড়ালিতে চর্বিযুক্ত ফোলাভাব
- চোখের কোণে হলুদ দাগ
- চোখের মণির চারপাশে সাদা বৃত্ত
প্রতিবার চিকিৎসকের কাছে রক্তপরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া উচিত।
কোন খাবারগুলো কলেস্টেরল বাড়ায়?
১. চিনি মেশানো পানীয়
সফট ড্রিংক বা কোলা জাতীয় পানীয়তে থাকা অতিরিক্ত ফ্রুক্টোজ শরীরে দ্রুত চর্বিতে রূপান্তরিত হয় এবং কলেস্টেরল বাড়ায়।
২. নারকেল তেল ও নারকেল দুধ
নারকেল তেলে ৮৬ শতাংশ স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে—যা মাখনের চেয়েও এক তৃতীয়াংশ বেশি। এটি এলডিএল বাড়ায়।
৩. ভাজা খাবার
ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, ফ্রাইড চিকেন, ডোনাট—এসব খাবারে ট্রান্স ফ্যাট থাকে যা কলেস্টেরল বাড়ায় এবং রক্তনালির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
৪. প্রক্রিয়াজাত আইসক্রিম
উচ্চমাত্রায় চিনি, দুধের চর্বি ও কৃত্রিম উপাদান থাকায় এসব আইসক্রিম রক্তে চর্বির মাত্রা বাড়ায়।
৫. নিষ্কাশনবিহীন কফি
ফ্রেঞ্চ প্রেস বা তুর্কিশ কফিতে থাকা ক্যাফেস্টল নামের উপাদান দেহে বাইল অ্যাসিড উৎপাদন কমায়, যা কলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে বাধা দেয়।
৬. প্রক্রিয়াজাত মাংস
বেকন, সসেজ ইত্যাদি প্রক্রিয়াজাত মাংস উচ্চমাত্রায় স্যাচুরেটেড ফ্যাটে ভরপুর, যা হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপের জন্যও দায়ী।
তবে কিছু চর্বিযুক্ত খাবার শরীরের জন্য উপকারীও
ডিম, দুধ, দই এবং ঝিনুক জাতীয় কিছু সামুদ্রিক খাবারে থাকা প্রাকৃতিক কলেস্টেরল শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়। এসব খাবার উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ এবং উপকারী ফ্যাট রয়েছে, যা হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক।
কীভাবে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনলে কলেস্টেরল কমবে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘পোর্টফোলিও ডায়েট’ অনুসরণ করলে রক্তে কলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। এর মূল চারটি উপাদান হলো:
১. সয়াবিন ও সয়া জাতীয় খাদ্য: যেমন টোফু, সয়া দুধ ইত্যাদি।
২. প্রতিদিন বাদাম ও বীজ: স্যালাড বা দইয়ের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
৩. উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার: ওটস, ডাল, শাকসবজি, বেগুন, ঢেঁড়স।
৪. প্ল্যান্ট স্টেরলস ও স্ট্যানলস: বাদাম, মটরশুঁটি, ও ফোর্টিফায়েড খাবারে পাওয়া যায়, যা অন্ত্রে চর্বি শোষণ কমায়।
কলেস্টেরল এখন আর শুধু হার্ট অ্যাটাকের ভয় নয়, মস্তিষ্কের ক্ষতির দিক থেকেও ভয়ংকর বার্তা দিচ্ছে। তাই এখনই সময় খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারায় পরিবর্তন আনার। সচেতন থাকলে এই নীরব ঘাতক থেকে নিজেকে রক্ষা করা সম্ভব।
নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত কলেস্টেরল শুধু হৃদরোগ নয়, ডিমেনশিয়ার ঝুঁকিও বাড়ায়। কোন খাবার থেকে সাবধান হবেন, আর কীভাবে ডায়েট বদলাবেন—জানুন এই প্রতিবেদনে।