বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, বগুড়া: শেরপুরে বিশেষ অভিযানে ১৯০ কেজি ওজনের একটি কষ্টিপাথরের মূর্তি উদ্ধার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এ সময় পাচারচক্রের দুই সদস্যকে আটক করা হয়েছে।
রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাতে উপজেলার দক্ষিণ আমুইন গ্রামের সোনালিয়া পুকুরপাড় এলাকার একটি মোটর ঘরের মেঝের নিচ থেকে মূর্তিটি উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত মূর্তিটির দৈর্ঘ্য ৫৭ ইঞ্চি, প্রস্থ ২৪ ইঞ্চি এবং বাজারমূল্য প্রায় দুই কোটি টাকা বলে জানিয়েছে র্যাব।
আটক ব্যক্তিরা হলেন— মো. আবুল বাসার রুবেল ও মো. আল আমিন সরকার।
র্যাব-১২ বগুড়া ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার ফিরোজ আহম্মেদ বলেন, আসামিরা উচ্চমূল্যে বিক্রি ও পাচারের উদ্দেশ্যে মূর্তিটি লুকিয়ে রেখেছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে মূর্তিটি উদ্ধার করা হয়েছে। আটক আসামিদের বিরুদ্ধে শেরপুর থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
কোথায় পাচার হয় এই মূর্তি
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, প্রত্নমূল্যবান কষ্টিপাথরের মূর্তিগুলো সাধারণত স্থানীয় দালালের মাধ্যমে প্রথমে সীমান্তবর্তী এলাকায় পৌঁছে দেওয়া হয়। এরপর ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ সীমান্তবর্তী রাজ্যে পাচার হয়ে যায়। সেখান থেকে দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো হয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করে এসব মূর্তি। শেষ পর্যন্ত ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের কিছু গোপন নিলামকেন্দ্র, ব্যক্তিগত সংগ্রহশালা ও গ্যালারিতে এগুলো বিক্রি হয়।
চাহিদা কেন
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রত্নমূল্যবান কষ্টিপাথরের মূর্তির আন্তর্জাতিক চাহিদা সবসময়ই বেশি থাকে। প্রাচীন ও অরিজিনাল নিদর্শন সংগ্রহ করার প্রবণতা ধনী ক্রেতাদের মধ্যে একটি মর্যাদার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঐতিহাসিক মূল্য ও দুষ্প্রাপ্যতার কারণে প্রতিটি মূর্তির মূল্য কয়েকগুণ বেড়ে যায়। অনেক সংগ্রাহক এগুলোকে অলংকার বা প্রদর্শনী সামগ্রী হিসেবেও ব্যবহার করে থাকেন। পাচারকারীরা এসব প্রত্নসম্পদকে বিদেশি বাজারে “অমূল্য শিল্পকর্ম” হিসেবে উপস্থাপন করে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেয়।
নজরদারি জোরদারের উদ্যোগ
র্যাব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রত্নসম্পদ পাচার রোধে সীমান্ত এলাকায় নজরদারি আরও বাড়ানো হচ্ছে। গোয়েন্দা নজরদারি চালিয়ে আন্তর্জাতিক পাচার নেটওয়ার্ক চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। উদ্ধার হওয়া মূর্তিটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।
প্রত্নসম্পদ পাচারের পূর্ববর্তী নজির
বাংলাদেশ থেকে প্রত্নসম্পদ পাচারের ঘটনা নতুন নয়। অতীতে একাধিকবার আন্তর্জাতিক বাজার থেকে বাংলাদেশের মূর্তি ও প্রত্নমূল্যবান নিদর্শন উদ্ধার করে দেশে ফেরত আনা হয়েছে। ১৯৯০ ও ২০০০-এর দশকে একাধিকবার ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে কষ্টিপাথরের মূর্তি উদ্ধার করা হয়, যেগুলো সীমান্ত হয়ে পাচারের পথে ছিল। কয়েক বছর আগে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের কিছু ব্যক্তিগত সংগ্রহশালা থেকে বাংলাদেশের প্রত্নসম্পদ চিহ্নিত করে ফেরত আনার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বহু মূল্যবান মূর্তি ও ভাস্কর্য ইতিমধ্যেই পাচার হয়ে বিদেশে চলে গেছে, যেগুলো ফেরত আনার জন্য কূটনৈতিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।
র্যাবের মতে, উদ্ধার হওয়া কষ্টিপাথরের মূর্তিটি কেবল একটি পাচার চক্রের উদাহরণ। আন্তর্জাতিক চাহিদা ও সীমান্তবর্তী দালালদের সক্রিয়তার কারণে বাংলাদেশের প্রত্নসম্পদ চোরাচালানের ঝুঁকি এখনও প্রবল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, এ ধরনের প্রত্নসম্পদ উদ্ধার অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।