রামেশ ভট্টরায়, কাঠমান্ডু: কয়েকদিনের অস্থিরতা, রক্তক্ষয়ী আন্দোলন ও সরকারের পতনের পর শনিবার থেকে ধীরে ধীরে চেনা ছন্দে ফিরতে শুরু করেছে নেপাল। বিদ্রোহ-পরবর্তী পরিস্থিতিতে রাজধানী কাঠমাণ্ডুতে উঠে গেছে কারফিউ। কাঠমাণ্ডু স্কোয়ারে দোকান ও শপিং মল খুলেছেন ব্যবসায়ীরা, রাস্তায় জমেছে মানুষের ভিড়। একইসঙ্গে বাজার পরিষ্কার এবং ক্ষতিগ্রস্ত সরকারি ভবনগুলোর সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে।
রাজনৈতিক অস্থিরতা কিন্তু থামেনি। সংসদ ভঙ্গের সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে নেপালের রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। সদ্য ভেঙে যাওয়া নিম্নকক্ষের স্পিকারও এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন।
গত সোমবার সোশ্যাল মিডিয়ায় নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে শুরু হওয়া বিক্ষোভ দ্রুত গণআন্দোলনের রূপ নেয়। পুলিশের গুলিতে বহু আন্দোলনকারী নিহত হন। ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে ইস্তফা দিতে বাধ্য হন প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি। কয়েকদিনের টানাপোড়েন শেষে শুক্রবার অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সুশীলা কারকি। নেপালের ইতিহাসে তিনিই প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী। শপথ গ্রহণের পর আন্দোলনের অন্যতম মুখ সুদান গুরুংকে তাঁর পা ছুঁয়ে প্রণাম করতে দেখা যায়।
সরকার বিরোধী আন্দোলনের সহিংসতায় গত কয়েকদিনে ৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন কাঠমাণ্ডুর মেয়র বালেন্দ্র শাহ। আহতদের হাসপাতালে গিয়ে খোঁজখবর নেন প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কারকিও।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বৈঠকেই সংসদ ভঙ্গের সুপারিশ করেন প্রধানমন্ত্রী কারকি। রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পৌডেল সেই প্রস্তাবে সই করে ঘোষণা দেন, আগামী ২০২৬ সালের ২১ মার্চ নেপালে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে এ সিদ্ধান্তকে অসাংবিধানিক ও স্বেচ্ছাচারী আখ্যা দিয়ে আপত্তি তুলেছে প্রায় সব প্রধান রাজনৈতিক দল এবং আইনজীবী সংগঠন। নেপালি কংগ্রেস বলেছে, সংসদ ভঙ্গ দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সংকটের মুখে ফেলেছে। নেপালের কমিউনিস্ট দলগুলোও তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। নেপাল বার অ্যাসোসিয়েশনের বক্তব্য, এই সিদ্ধান্ত সংবিধানের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করছে এবং জনগণের আস্থা দুর্বল করছে।
এর আগে গত সপ্তাহের শনিবারও দরবার স্কোয়ার ও পশুপতিনাথ মন্দিরে ছিল পর্যটক ও পুণ্যার্থীর ঢল। কিন্তু সরকারের বিরুদ্ধে গণঅসন্তোষের বিস্ফোরণে মাত্র দু’দিনে ছবিটা আমূল পাল্টে যায়। পুরো নেপাল কার্যত রণক্ষেত্রে পরিণত হয়, পর্যটনকেন্দ্রগুলো ফাঁকা হয়ে যায়।