Home খেলাধুলা কানা মাছি: হারিয়ে যাওয়া শৈশবের ছোঁয়া

কানা মাছি: হারিয়ে যাওয়া শৈশবের ছোঁয়া

ছবি : উইকিপিডিয়া
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, যশোর: বাংলার মাটি, মানুষ আর শিশুকালের নির্মল আনন্দের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিল যে খেলাগুলো, তার মধ্যে অন্যতম ‘কানা মাছি’। আজকের ডিজিটাল গেমিং আর প্রযুক্তিনির্ভর বিনোদনের ভিড়ে কানে বাজে না সেই চেনা শব্দ—“কানা মাছি ভোঁ ভোঁ, যাকে পাবি তাকে ছোঁ।” অথচ একসময় গ্রামবাংলার প্রতিটি উঠানে, বিকেলবেলার স্কুল মাঠে কিংবা চাঁদের আলোতে ভেজা গাঁয়ের ধুলোমাখা পথেও এ খেলার সরব উপস্থিতি ছিল।
কেমন ছিল কানা মাছির খেলা?
কানা মাছি একটি গ্রুপভিত্তিক আউটডোর খেলা। সাধারণত ৫ থেকে ১০ জনের দল নিয়ে এটি খেলা হয়। খেলায় একজন ‘মাছি’ হয়, যার চোখ কাপড় দিয়ে বেঁধে দেওয়া হয়। বাকিরা তাকে ঘিরে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। চোখ বাঁধা মাছি কাউকে ধরার চেষ্টা করে, আর আশেপাশের সবাই তাকে বিভ্রান্ত করে ছুঁয়ে পালিয়ে যায়। এই দৌড়ঝাঁপ আর হাসি-ঠাট্টায় খেলা চলে। যার গায়ে ‘মাছি’ প্রথম স্পর্শ করে এবং তার নাম বলে দিতে পারে, সে হয় পরবর্তী ‘কানা মাছি’।
এই খেলাটি শুধু আনন্দই দেয়নি, এটি ছিল এক ধরনের শারীরিক ও মানসিক কৌশলের চর্চাও। চোখ বাঁধা অবস্থায় পথ খোঁজার চেষ্টা, কণ্ঠস্বর শুনে আন্দাজ করা, দ্রুত গতিতে পালিয়ে বাঁচা—সবই ছিল এই খেলার অংশ।
শৈশবের চেনা আঙিনা থেকে হারিয়ে যাওয়া:
সামাজিক বন্ধন ও পারস্পরিক যোগাযোগে যে আন্তরিকতা একসময় ছিল, কানা মাছির মতো খেলাগুলো তারই প্রতিচ্ছবি। ছেলেমেয়েরা দলবেঁধে খেলত, কখনো কোনো দেয়াল বা বেড়া ভেঙে যেত, কখনো পড়ে গিয়ে হাঁটু ছড়িয়ে রক্ত ঝরত—তবু খেলার আনন্দে কেউ দমতো দিত না।
কিন্তু সময় বদলেছে। এখন আর সেই উঠানে ছুটে বেড়ানো শিশুদের কণ্ঠে শোনা যায় না—“ধরলি রে! আমি তোকে ধরেছি!” এখন তারা ব্যস্ত মোবাইল, ট্যাব আর অনলাইন গেমে। শহরে তো বটেই, এমনকি গ্রামেও খেলার মাঠ, সহপাঠীর সঙ্গ এবং নৈশবেলা—সবই আজ যেন অতীত।
শিশু বিকাশে গুরুত্ব ছিল এই খেলার:
মানসিক বিকাশ, দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ, শ্রবণশক্তি বাড়ানো এবং সামাজিক বন্ধন তৈরিতে কানা মাছি ছিল এক দারুণ উপকারী খেলা। বিশেষজ্ঞরাও মনে করেন, চোখ বন্ধ করে অন্য ইন্দ্রিয় ব্যবহার করে খেলার এই কৌশল শিশুর বিকাশে সহায়ক।
সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধারের ডাক:
গ্রাম বাংলার অনেক অঞ্চলে আজও কিছু প্রবীণ ব্যক্তি স্মৃতিচারণ করেন এই খেলাটি নিয়ে। বিভিন্ন স্কুল বা সাংস্কৃতিক সংগঠন যদি আবার এসব হারিয়ে যাওয়া খেলাকে নবজাগরণের সুযোগ দেয়, তবে আজকের শিশুদেরও ফিরিয়ে আনা যাবে মাটির গন্ধে ভেজা এক গভীর আনন্দভূমিতে।
কানা মাছি শুধু একটি খেলা নয়, এটি ছিল শৈশবের এক আবেগময় অধ্যায়, যা আজ স্মৃতি হয়ে বেঁচে আছে। আমাদের দায়িত্ব হলো সেই স্মৃতিকে গল্পে, চর্চায় ও উৎসবে জীবিত রাখা।

আপনার শৈশবেও কি কানা মাছির স্মৃতি আছে? নিচে মন্তব্যে লিখে জানান!