গাফিলতিতে ফুঁসে উঠেছে জনমত
দুই বছরের শিশু আয়েশাসহ নিহত তিন, দায়ী ট্রেন চালকের সিগন্যাল অমান্য: রেল কর্মকর্তারা
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: কালুরঘাট সেতুর বোয়ালখালী অংশে পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনের সঙ্গে একাধিক যানবাহনের ভয়াবহ সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে তিনজনে। বৃহস্পতিবার (৫ জুন) রাত ১০টা ১৫ মিনিটের দিকে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে রয়েছে দুই বছর বয়সী শিশু আয়েশা, মোহাম্মদ তুষার এবং এক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি।
এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অন্তত পাঁচজন। আহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে তিনজনের পরিচয় পাওয়া গেছে: আসিফ উদ্দিন বাপ্পি, আসমা আহমেদ ও আঞ্জু আরা।
নিহত শিশু আয়েশা বোয়ালখালী উপজেলার বাসিন্দা সাজ্জাদ নূর মিঠু ও জুবাইদা ফেরদৌস ইসরার একমাত্র কন্যা। দুর্ঘটনার সময় তারা অটোরিকশায় ছিলেন। দুর্ঘটনার পর আয়েশার নিথর দেহ কোলে নিয়ে পিতার কান্না ও আর্তনাদ ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক মাধ্যমে, যা জনমনে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, সেতুর ওপর একটি গাড়ি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় যানজটের সৃষ্টি হয়। ঠিক তখনই কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনটি ব্রিজে উঠে যায়। অথচ নিয়ম অনুযায়ী, ট্রেনটিকে পূর্ব প্রান্তে থেমে লাইনম্যানের সংকেত পেয়ে সেতুতে উঠতে হতো।
গোমদণ্ডী রেলওয়ে স্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার আজম উদ্দিন বলেন, “ট্রেন চালকের নিয়ম অনুযায়ী থেমে সংকেত নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি তা মানেননি। উল্টো দিক থেকে গাড়িও আসছিল, ফলে সংঘর্ষ এড়ানো যায়নি।”
জালানিহাট স্টেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত গার্ড মো. মাহবুব জানান, “আমি নিজে পরিস্থিতির ঝুঁকি বুঝে সেতুর মুখে গিয়ে লাল পতাকা নাড়িয়ে ট্রেন থামাতে সংকেত দিই। কিন্তু চালক সে সংকেত উপেক্ষা করে ট্রেন চালিয়ে যান।”
ঘটনার পর অটোরিকশা, একটি মাইক্রোবাস এবং কয়েকটি মোটরসাইকেল ট্রেনের ধাক্কায় দুমড়ে-মুচড়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা আহতদের উদ্ধার করে, এবং রাত ১১টার দিকে কালুরঘাট ফায়ার সার্ভিস, রেলওয়ে ও থানা পুলিশের যৌথ উদ্ধার অভিযান শুরু হয়।
এ দুর্ঘটনায় চালকের গাফিলতি নিয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের ভেতরেও চাপা ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ কালুরঘাট সেতু দিয়ে ট্রেন ও যানবাহন একসঙ্গে চলাচল কীভাবে অনুমোদিত থাকে।