Home দিল্লি ভারতে কাশির সিরাপের বিষে একের পর এক শিশুর প্রাণহানি

ভারতে কাশির সিরাপের বিষে একের পর এক শিশুর প্রাণহানি

ছবি এ আই
‘স্রেসান ফার্মা’র মালিক রঙ্গনাথন গ্রেপ্তার 
হেলথ ডেস্ক: বিষাক্ত কাশির ওষুধ খেয়ে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে একের পর এক শিশুমৃত্যুর ঘটনায় অবশেষে গ্রেফতার করা হয়েছে তামিলনাড়ুর ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা ‘স্রেসান ফার্মা’–র মালিক রঙ্গনাথনকে। বুধবার গভীর রাতে চেন্নাই থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে মধ্যপ্রদেশ পুলিশ। বর্তমানে তাঁকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

সম্প্রতি মধ্যপ্রদেশে অন্তত ২০টি শিশুর মৃত্যুর পর এই ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। একই ধরনের মৃত্যুর খবর আসে পঞ্জাব, হরিয়ানা ও রাজস্থান থেকেও। অভিযোগ ওঠে, ‘কোল্ডরিফ’ (Coldrif) নামের এক কাশির সিরাপ খাওয়ার পরই শিশুদের মৃত্যু হয়। সিরাপটি তৈরি করেছিল তামিলনাড়ুর বিতর্কিত সংস্থা ‘স্রেসান ফার্মা’। শিশুমৃত্যুর ঘটনার পর ওই সংস্থার বিরুদ্ধে একাধিক রাজ্যে মামলা দায়ের হয়। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই রঙ্গনাথনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি অভিযান চালায় পুলিশ।

তামিলনাড়ু পুলিশও দীর্ঘদিন ধরে তাঁকে খুঁজছিল। এমনকি তাঁর অবস্থান সম্পর্কে তথ্য দিতে পারলে ২০,০০০ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল। অবশেষে বুধবার রাতে চেন্নাইয়ে অভিযান চালিয়ে তাঁকে আটক করে মধ্যপ্রদেশের বিশেষ তদন্ত দল।

পরীক্ষায় বেরিয়ে এসেছে ভয়াবহ তথ্য। ‘কোল্ডরিফ’ সিরাপের নমুনা পরীক্ষায় দেখা যায়, তাতে রয়েছে ৪৮.৬ শতাংশ ডাই-ইথাইল গ্লাইকল (DEG)—একটি মারাত্মক রাসায়নিক পদার্থ যা মানুষের কিডনি বিকল, লিভারের ক্ষতি এবং স্নায়ুতন্ত্রের বিকলতা ঘটাতে পারে। চিকিৎসকরা মনে করছেন, ওই রাসায়নিকই শিশুদের মৃত্যুর মূল কারণ।

তদন্তে আরও প্রকাশ, ‘স্রেসান ফার্মা’র কারখানায় ডিইজি-র খালি কৌটো পাওয়া গেছে। অনুমোদিত সীমা যেখানে মাত্র ০.১ শতাংশ, সেখানে সংস্থাটি সিরাপে মেশাচ্ছিল ৪৬ থেকে ৪৮ শতাংশ পর্যন্ত ডিইজি। আরও বিস্ময়কর তথ্য হলো—সংস্থার GMP (Good Manufacturing Practice) সনদও ছিল না, অথচ তারা দীর্ঘদিন ধরে ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাত করছিল।

ঘটনার পর দেশের নয়টি রাজ্যে ‘কোল্ডরিফ’ সিরাপ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। কেন্দ্রীয় ও রাজ্যস্তরে পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এদিকে, ওই সিরাপ লিখে দেওয়া চিকিৎসককেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শিশুমৃত্যুর ঘটনায় তাঁর ভূমিকাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

দেশজুড়ে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্ষোভের ঝড় উঠেছে। অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে শিশুদের ওষুধ নিয়ে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঘটনা ভারতের ওষুধনির্ভরতা ও মাননিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার ভয়াবহ দুর্বলতা তুলে ধরেছে।

শেষ কথা:
একটি বোতল কাশির ওষুধ, আর তার মধ্যে লুকিয়ে থাকা মৃত্যু—এই ট্র্যাজেডি শুধু কয়েকটি পরিবারের নয়, গোটা দেশের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। এখন দেখার, ন্যায়ের দৌড় কতদূর যায়।