Home স্বাস্থ্য লবণ-নির্ভর খাদ্যাভ্যাসে বাড়ছে কিডনির ক্ষতি

লবণ-নির্ভর খাদ্যাভ্যাসে বাড়ছে কিডনির ক্ষতি

হেলথ ডেস্ক: প্রতিদিনের খাবারে টক-আচার, শুকনা মাছ কিংবা মাছের ঝোল—এসবই ৬৫ বছরের মিনহ’র ডাইনিং টেবিলে স্মৃতিমাখা স্বাদের অংশ। কিন্তু এই নোনতা অভ্যাসই তাকে নিয়ে গেছে ভয়াবহ কিডনি রোগের দিকে।

দশ বছর আগে মিনহ ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হন। চিকিৎসকরা লবণ কম খাওয়ার পরামর্শ দিলেও তিনি আবারও আগের মতো লবণসমৃদ্ধ খাবারে ফিরে যান। চলতি সেপ্টেম্বর মাসে দীর্ঘ ক্লান্তি ও ক্ষুধামন্দার পর পরীক্ষায় ধরা পড়ে তার কিডনি বিকল হয়েছে। এখন তাকে নিয়মিত ডায়ালাইসিস নিতে হচ্ছে।

চিকিৎসকদের মতে, শুকনা মাছ, আচার, মাছের সস ইত্যাদি লবণসমৃদ্ধ খাবার দীর্ঘদিন খাওয়ার ফলে মিনহ’র কিডনি অতিরিক্ত চাপের মধ্যে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তরুণরাও ঝুঁকিতে

কেবল বয়স্ক নন, তরুণদের মধ্যেও কিডনি রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। হানয়ের বাচ মাই হাসপাতাল পাঁচ বছর আগে এক ৩০ বছর বয়সী যুবককে শেষ পর্যায়ের কিডনি ব্যর্থতায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত করে। সে সময় তিনি নিজেকে সুস্থই ভাবতেন, তবে নিয়মিত প্রক্রিয়াজাত খাবার ও ফাস্টফুড খাওয়ার অভ্যাসেই রোগ ধরা পড়ে।

হো চি মিন সিটির চো রাই হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের প্রথম তিন মাসে নিয়মিত ডায়ালাইসিস নিয়েছেন ৪৫০ রোগী, যার মধ্যে প্রায় ৬০ জনের বয়স ৩৫ বছরের নিচে। একই শহরের বিন দান হাসপাতালে বহির্বিভাগে আসা কিডনি রোগীদের এক-তৃতীয়াংশের বয়স ৪০-এর নিচে।

ভয়াবহ পরিসংখ্যান

বিশ্বজুড়ে প্রায় ৮৫০ মিলিয়ন মানুষ দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে ভুগছেন, যা বর্তমানে মৃত্যুর তৃতীয় দ্রুত-বর্ধনশীল কারণ। ভিয়েতনামে এই রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা এক কোটি ছাড়িয়েছে, যা মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশেরও বেশি। দেশটিতে এটি অষ্টম প্রধান মৃত্যুর কারণ হিসেবে তালিকাভুক্ত।

লবণের অতিরিক্ত প্রভাব

হো চি মিন সিটি ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারের ড. ন্গো থি কিম ওয়ান বলেন, দীর্ঘমেয়াদে অতিরিক্ত সোডিয়াম গ্রহণ কিডনির ওপর ভয়াবহ চাপ তৈরি করে। এতে রক্তচাপ বাড়ে, কিডনির ফিল্টার ইউনিট ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ধীরে ধীরে কিডনির কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়।

কিডনির বাইরেও লবণের ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। হানয়ের কে হাসপাতালের ড. ট্রান ডুক কানহ জানালেন, অতিরিক্ত লবণ শরীরে পানি জমিয়ে রক্তের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়, যা হৃদপিণ্ডের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। এর ফলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, হাড়ের ক্ষয়, কিডনিতে পাথর এমনকি স্মৃতিশক্তি দুর্বলতাও হতে পারে।

ভিয়েতনামে লবণ গ্রহণের মাত্রা

২০২১ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক জরিপে দেখা গেছে, ভিয়েতনামে গড়ে প্রতিদিন একজন মানুষ ৮.৪ গ্রাম লবণ খায়—যা ডব্লিউএইচও’র সুপারিশকৃত সীমার প্রায় ৭০ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে ২০২০ সালের জাতীয় পুষ্টি জরিপে দেখা গেছে, ফলমূল ও শাকসবজি গ্রহণের হার ৭০ শতাংশেরও নিচে, অথচ ইনস্ট্যান্ট নুডলস ও উচ্চ সোডিয়ামযুক্ত সিজনিংয়ের ব্যবহার ব্যাপক।

হো চি মিন সিটিতে ১৯ থেকে ৩৯ বছর বয়সীদের ওপর করা এক জরিপে দেখা গেছে, প্রায় অর্ধেক মানুষ নিয়মিত ফাস্টফুড খান। এর মধ্যে পুরুষ ও ১৬–২৪ বছর বয়সীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ।

চিকিৎসকদের পরামর্শ

চিকিৎসকরা মাছের সস, সয়াসস ও সিজনিং পাউডার কম ব্যবহার করার পাশাপাশি রান্নায় লবণ কমিয়ে লেবু বা ভিনেগার ব্যবহার করতে বলছেন। ইনস্ট্যান্ট নুডলস, সসেজ, ক্যানজাত খাবার ও প্যাকেটজাত নোনতা স্ন্যাকস এড়িয়ে চলা এবং কম-সোডিয়াম খাবার বেছে নেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।