Home সারাদেশ মোহাম্মদপুরে এক ঘণ্টায় দুই খুন: কিশোর গ্যাংয়ের দাপটে আতঙ্ক

মোহাম্মদপুরে এক ঘণ্টায় দুই খুন: কিশোর গ্যাংয়ের দাপটে আতঙ্ক

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও আদাবর এলাকাজুড়ে এক ঘণ্টার ব্যবধানে ঘটে যাওয়া দুটি নির্মম হত্যাকাণ্ডে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে। বুধবার (১৬ জুলাই) রাত ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে এই দুটি হত্যাকাণ্ডে প্রাণ হারিয়েছেন দুই ব্যক্তি। একজন গুলিতে, অপরজন কুপিয়ে হত্যার শিকার হয়েছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের আধিপত্য, মাদক ব্যবসা ও বিচারবহির্ভূত প্রভাবের কারণেই এই হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটছে।

সালিশে গুলির ঘটনা: পরিকল্পিত খুন?

রাত ৮টার দিকে নবোদয় হাউজিং এলাকার ১০ নম্বর সড়কে বায়তুল মামুর জামে মসজিদের সামনে একটি সালিশি বৈঠক চলছিল। এ সময় মোটরসাইকেলে আসা তিন যুবক হঠাৎ গুলি ছুড়তে শুরু করে। টার্গেট ছিলেন প্রাইভেট কারচালক ইব্রাহিম (৩২)। গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, এ হামলা ছিল পূর্বপরিকল্পিত।

স্থানীয়রা তৎপরতা দেখিয়ে হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে রুবেল (৩৫) ও সজীব (৩০) নামে দুজনকে ধরে ফেলে এবং পুলিশে সোপর্দ করে। তাদের কাছ থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র ও ব্যবহৃত মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। পুলিশের ধারণা, পারিবারিক বিরোধ, সালিশ সংক্রান্ত কোনো পূর্বশত্রুতা অথবা মাদক সংশ্লিষ্ট কারণে এ হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে।

কিশোর গ্যাংয়ের প্রতিশোধ: সোর্স পরিচয়ে খুন

মাত্র এক ঘণ্টা পর রাত ৯টার দিকে মোহাম্মদপুরের চাঁদ উদ্যান এলাকায় আবারও রক্তাক্ত ঘটনা ঘটে। আল আমিন (২৭) নামে এক যুবককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে স্থানীয় কিশোর গ্যাং সদস্যরা। এলাকাবাসীর দাবি, নিহত আল আমিন কিছুদিন ধরে পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করতেন এবং সম্প্রতি কিশোর গ্যাংয়ের লিডার মোশারফের ছোট ভাইকে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দেন। এ ঘটনার প্রতিশোধ নিতেই মোশারফ ও গিট্টুসহ কয়েকজন সংঘবদ্ধভাবে আল আমিনের ওপর হামলা চালায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চাঁদ উদ্যান ৬ নম্বর রোডের মাথায় কয়েকজন তরুণ মুখ ঢেকে লাঠি ও চাপাতি নিয়ে হামলা করে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই ঘটনাস্থল ত্যাগ করে তারা। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আল আমিনের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে।

পুলিশের বক্তব্য ও চলমান অভিযান

ঘটনার পরপরই তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার জুয়েল রানা জানান, “আমরা দুটি ঘটনাস্থলেই উপস্থিত আছি। আলামত সংগ্রহ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য নিচ্ছি। দুজন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের ধরতে অভিযান চলছে।”

পুলিশের অপর একটি সূত্র জানায়, দুটি হত্যাকাণ্ডের মধ্যে কোনো যোগসূত্র রয়েছে কি না, সেটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে প্রথম হত্যাটি ব্যক্তিগত শত্রুতার জের, দ্বিতীয়টি কিশোর গ্যাংয়ের আধিপত্য বিস্তার ও প্রতিশোধমূলক হামলা।

নাগরিকদের উদ্বেগ ও নিরাপত্তা প্রশ্নে প্রশ্ন

এক ঘণ্টার ব্যবধানে রাজধানীর একটি এলাকায় দুইটি হত্যাকাণ্ড নতুন করে নগর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। নবোদয় হাউজিং ও চাঁদ উদ্যান উভয় এলাকাতেই দীর্ঘদিন ধরে কিশোর গ্যাং, মাদক কারবার ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। বিশেষ করে সালিশ বা বিচারপ্রক্রিয়ার জায়গায় প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে হত্যার ঘটনা পুরো সমাজ ব্যবস্থাকেই চ্যালেঞ্জ করছে।

স্থানীয় বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, “আমরা তো মসজিদের সামনে বিচার করছিলাম। সেখানে এসে গুলি চালানো হলে আর কে কোথায় নিরাপদ?”

বিশ্লেষকদের মত

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় কিশোর গ্যাং এখন অপরাধের নিয়ন্ত্রক শক্তি হিসেবে গড়ে উঠছে। তারা মাদক ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত এবং পুলিশের সোর্সদের খুঁজে বের করে হামলা চালাচ্ছে। এতে এলাকাভিত্তিক সন্ত্রাস ও বিচারবহির্ভূত ‘গ্যাং সংস্কৃতি’ দানা বাঁধছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযান চালানোর দাবি থাকলেও, স্থানীয় পর্যায়ে গোয়েন্দা নজরদারি এবং সামাজিক প্রতিরোধ না গড়লে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে না—এমন মন্তব্য করেছেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা।