Home আন্তর্জাতিক সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিসিঞ্জার আর নেই

সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিসিঞ্জার আর নেই

হেনরি কিসিঞ্জার। ছবি সংগৃহীত।

বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ১০০ বছর। সর্বশেষ তিনি নিক্সন ও ফোর্ড প্রশাসনে দেশটির শীর্ষ কূটনীতিক ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছিলেন।

তার প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক কনসালটিং প্রতিষ্ঠান – কিসিঞ্জার এসোসিয়েটস এর এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, জার্মান বংশোদ্ভূত এই সাবেক কূটনীতিক কানেক্টিকাটে তার বাড়িতে মারা গেছেন। তবে বিবৃতিতে তার মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে কিছু জানানো হয়নি বলে বিবিসি উল্লেখ করেছে।

আমেরিকার দুই প্রেসিডেন্টের আমলে  পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে কাজ করেছেন কিসিঞ্জার। প্রথমে রিচার্ড নিক্সনের নেতৃত্বাধীন প্রশাসনে, পরে জেরাল্ড ফোর্ডের আমলে। মনে করা হয় যে, বহু আন্তর্জাতিক সঙ্কটে আমেরিকার কূটনৈতিক অবস্থানের নেপথ্যে মূলত কিসিঞ্জারেরই হাত ছিল। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে ১৯৭৩ সালে ইজ়রায়েল এবং প্যালেস্টাইনের মধ্যে হওয়া ইয়ম কিংপুরের যুদ্ধ থামাতে তাঁর ভূমিকার কথা স্মরণ করেন কেউ কেউ। আবার ভিয়েতনাম যুদ্ধের পর প্যারিস শান্তি চুক্তির অন্যতম স্থপতি হিসাবেও কেউ কেউ তাঁর অবদানের কথা স্বীকার করেন।

তবে একাধিক বিতর্কেও জড়িয়েছে কিসিঞ্জারের নাম। যেমন মানবাধিকারের প্রশ্নে তৎকালীন সোভিয়েট ইউনিয়নের সঙ্গে দ্বন্দ্বের পরিবেশ বজায় রাখা, চিলির মতো বেশ কিছু দেশে স্বৈরাচারী শাসকদের মদত দিয়ে যাওয়া ইত্যাদি একাধিক অভিযোগে অভিযুক্ত ছিলেন শতায়ু এই কূটনীতিক। ১৯৬৯ সালে নিক্সন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট থাকার সময়ে কিসিঞ্জার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হন। ১৯৭১ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর কিসিঞ্জারের ভূমিকা নানা কারণ সমালোচনার মুখে পড়েছিল।

সেই সময় নিক্সনের দূত হয়ে কিসিঞ্জার ভারতেও এসেছিলেন। তদানীন্তন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধীর সঙ্গে তাঁর বৈঠকও হয়। সেই বৈঠক ভারতের পক্ষে খুব ফলপ্রসূ হয়নি। কারণ, সে সময় আমেরিকা এবং পাকিস্তান পরস্পরের ঘোষিত মিত্র ছিল। ভারত-পাক বিবাদে আমেরিকা সে সময় পাকিস্তানের পক্ষেই দাঁড়িয়েছিল। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে (অধুনা বাংলাদেশ) সাধারণ মানুষের উপর পাক সেনা যে অত্যাচার চালাচ্ছিল, তার বিরুদ্ধেও আমেরিকা সে সময় কিছুতেই মুখ খোলেনি। সেই সময় কিসিঞ্জারের উগ্র ‘ভারত-বিরোধিতা’ নিয়েও চর্চা শুরু হয়। পরে অবশ্য এই নিয়ে একাধিক সাক্ষাৎকারে তাঁর উপর নানাবিধ ‘চাপ’ থাকার কথা বলেছিলেন কিসিঞ্জার।

১৯২৩ সালে জার্মানিতে জন্ম কিসিঞ্জারের। নাৎসি শাসনে ভীত কিসিঞ্জারের পরিবার ১৯৩৮ সালে আমেরিকায় চলে আসে। ১৯৪৩ সালে কিসিঞ্জার আমেরিকার নাগরিকত্ব পান এবং তিন বছরের পর সে দেশের সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। পরে সেনার গোয়েন্দা শাখাতেও যোগ দিয়েছিলেন তিনি। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে দীর্ঘ দিন আমেরিকার হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনাও করেন তিনি। ১৯৬৯ সালে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসাবে প্রথম খ্যাতি পান কিসিঞ্জার।নানা বিতর্ককে সঙ্গী করেই ১৯৭৩ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার পান তিনি।