Home অন্যান্য কুকুরের সঙ্গে বিয়ে, ভারতের গ্রামে শতাব্দী পুরোনো বিশ্বাস

কুকুরের সঙ্গে বিয়ে, ভারতের গ্রামে শতাব্দী পুরোনো বিশ্বাস

ছবি: এ আই

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতের গ্রামীণ জীবনে বিয়ে মানে শুধু সামাজিক বা পারিবারিক সম্পর্ক নয়, এটি বিশ্বাস, ধর্মীয় রীতি এবং আধ্যাত্মিক ভয়ের এক মিশ্র অভিব্যক্তি। কিন্তু এমন একটি প্রথা রয়েছে, যা শুনলে আধুনিক মানুষ অবাক না হয়ে পারে না—মানুষের সঙ্গে কুকুরের বিয়ে।

এই রীতি বিশেষভাবে দেখা যায় ভারতের ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা ও ছত্তিশগড়ের কিছু উপজাতি এলাকায়। স্থানীয়দের ধারণা, কোনো মেয়ের জন্মছকে যদি মাঙ্গলিক দোষ বা শনি দোষ থাকে, তবে সেই মেয়ের প্রথম বিয়ে কুকুরের সঙ্গে দিতে হয়। এই বিয়ের মাধ্যমে তার জীবনে থাকা অশুভ গ্রহের প্রভাব কুকুরের উপর স্থানান্তরিত হয়। এর পর মেয়েটি নির্ভয়ে মানুষের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে। তাদের বিশ্বাস, এতে জীবনের অমঙ্গল সরে যায় এবং নতুন জীবনে আসে স্থিতি ও সৌভাগ্য।

বিয়ের আয়োজন

এই বিয়ের আয়োজন প্রায় সত্যিকারের বিয়ের মতোই জাঁকজমকপূর্ণ হয়। গ্রামে ঢোল আর বাঁশির সুরে শুরু হয় উৎসবের আমেজ। ফুল দিয়ে সাজানো হয় একটি গৃহপালিত কুকুরকে, যাকে সেদিন বর হিসেবে গ্রহণ করা হয়। তার গলায় পরানো হয় মালা, মাথায় বাঁধা হয় রঙিন ফিতা। অপরদিকে মেয়েটিকে সাজানো হয় লাল শাড়িতে, হাতে গয়না, কপালে সিঁদুর। গ্রামের পুরোহিত বা প্রবীণ কেউ মন্ত্র পড়ে এই বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন। এরপর কুকুরটিকে খাওয়ানো হয় দুধ, ভাত ও মাংস, ঠিক যেন এক প্রকৃত বর।

বিশ্বাসের পেছনের যুক্তি

স্থানীয় প্রবীণদের মতে, কুকুর একটি পবিত্র প্রাণী, মানুষের বন্ধু ও রক্ষক। তাই সে অশুভ শক্তি নিজের ওপর নিতে পারে। তাদের বিশ্বাস, এই বিয়ের পর মেয়েটির জীবনে আর কোনো অমঙ্গল থাকে না, সংসারে আসে শান্তি ও সমৃদ্ধি।

আধুনিক দৃষ্টিতে

শিক্ষিত সমাজের অনেকেই এই প্রথাকে কুসংস্কার বলে সমালোচনা করেন। তারা মনে করেন, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এমন প্রথা পরিবর্তন হওয়া উচিত। তবে এখনো ভারতের কিছু দূরবর্তী গ্রামে এই রীতি টিকে আছে, যেখানে ধর্ম, ভয় ও সংস্কারের মিশেলে মানুষ খোঁজে মানসিক নিরাপত্তা।

বিশ্বাসের ছায়ায় এক অদ্ভুত বাস্তবতা

মাটির উঠোনে ফুলে সাজানো কুকুরের পাশে বসে থাকা এক তরুণীর মুখে দেখা যায় মিশ্র হাসি। বাইরে থেকে এটি যতই অদ্ভুত মনে হোক না কেন, তার সেই হাসির আড়ালে লুকিয়ে থাকে গভীর বিশ্বাস। সে বিশ্বাস করে, এই বিয়ের মাধ্যমেই অশুভ সরে যাবে, আর জীবনে আসবে নতুন আলো।