Home রেমিটেন্স যোদ্ধাদের খবর কুয়ালালামপুরে ইমিগ্রেশন অভিযান: দ্বিতীয় সর্বাধিক আটক বাংলাদেশিরা

কুয়ালালামপুরে ইমিগ্রেশন অভিযান: দ্বিতীয় সর্বাধিক আটক বাংলাদেশিরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

মালয়েশিয়ার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চলতি বছরের শুরু থেকে দেশজুড়ে নিয়মিত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে ইমিগ্রেশন বিভাগ। কুয়ালালামপুরে ২০ মে পর্যন্ত পরিচালিত ২৭২টি অভিযানে বাংলাদেশিসহ অন্তত ১ হাজার ৭৮৯ জন অবৈধ অভিবাসীকে আটক করা হয়েছে। এই অভিযানকে বলা হচ্ছে চলতি বছরের অন্যতম কঠোর অভিযান।

২১ মে এক সরকারি বিবৃতিতে কুয়ালালামপুর ইমিগ্রেশন বিভাগের পরিচালক দাতুক ওয়ান মোহাম্মদ সৌপি ওয়ান ইউসুফ জানিয়েছেন, চলমান অভিযানে মোট ৩ হাজার ৫৮৭ জন ব্যক্তির ওপর তল্লাশি চালানো হয়েছে। তল্লাশি পর্বে যাদের কাছে বৈধ নথিপত্র পাওয়া যায়নি বা যাদের বিরুদ্ধে অভিবাসন আইন ভঙ্গের অভিযোগ রয়েছে, তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

কাদের ধরা হয়েছে?
আটকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় রয়েছেন ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক। এর পরের অবস্থানে রয়েছেন বাংলাদেশিরা। মিয়ানমার ও পাকিস্তানের অভিবাসীরাও ধরা পড়েছেন অভিযান চলাকালীন। আটক অভিবাসীদের বিরুদ্ধে মূলত যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে—

  • বৈধ ভিসার অনুপস্থিতি
  • কাজের অনুমতিপত্র না থাকা
  • ভিসার শর্ত লঙ্ঘন মেয়াদোত্তীর্ণ বা নকল কাগজপত্র ব্যবহার
  • ভিসা থাকার পরও অনুমোদিত কর্মক্ষেত্র ছাড়া অন্যত্র কাজ

নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে কেন?
ওয়ান মোহাম্মদ সৌপি বলেন, ‘‘দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব বজায় রাখতে প্রতিদিনই এনফোর্সমেন্ট অভিযান চালানো হয়। এটি আমাদের অঙ্গীকার। মালয়েশিয়াকে নিরাপদ রাখতে প্রয়োগ কার্যক্রমে কোনো দিন ছুটি নেই।’’

তিনি আরও বলেন, অনেক অবৈধ অভিবাসী স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবিকা হুমকির মুখে ফেলছেন। অনেকে অপরাধমূলক কার্যকলাপে জড়িত থাকায় তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

অভিবাসীদের ফেরার সুযোগ: প্রত্যাবাসন কর্মসূচি ২.০
অবৈধ অভিবাসীদের জন্য চালু হয়েছে ‘Recalibration Programme 2.0’ নামে একটি বিশেষ স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসন কর্মসূচি। ১৯ মে থেকে শুরু হওয়া এই উদ্যোগের আওতায় মাত্র দুই দিনের মাথায় ৯৬ জন অভিবাসী অংশ নিয়েছেন।

এই কর্মসূচির অধীনে যারা বৈধ নথিপত্র ছাড়াই মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন, তারা নির্ধারিত জরিমানা দিয়ে নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। এতে কোনও জেল বা কালো তালিকাভুক্তির আশঙ্কা থাকছে না। তবে যেকোনো ইমিগ্রেশন অফিসে যাওয়ার আগে প্রাক-নিবন্ধনের পরামর্শ দিয়েছেন কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশিদের অবস্থা ও চ্যালেঞ্জ:
মালয়েশিয়ায় আনুমানিক ৮ থেকে ১০ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক অবস্থান করছেন, যাদের একটি বড় অংশ রিক্রুটিং এজেন্টদের প্রতারণা বা মধ্যস্থতাকারী দালালের ফাঁদে পড়ে বৈধ কাগজপত্র হারিয়ে ফেলেন। আবার অনেকেই চুক্তিভিত্তিক কর্মসংস্থান শেষে থেকেছেন দেশে না ফিরে।

মালয়েশিয়ায় বসবাসরত অনেক বাংলাদেশি সম্প্রতি জানান, হঠাৎ অভিযান বাড়ায় আতঙ্কে দিন কাটছে। যারা বৈধ নন, তারা কর্মক্ষেত্রে যেতে ভয় পাচ্ছেন। অন্যদিকে যারা বৈধ নথিপত্র নিয়েও কাজের জায়গা বদল করেছেন, তারাও কখনো কখনো হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

বিশেষজ্ঞ মত:
প্রবাসী কল্যাণ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মালয়েশিয়ায় কাজ করতে আসা শ্রমিকদের জন্য আরও স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক নিয়োগ প্রক্রিয়া থাকা প্রয়োজন। একইসঙ্গে অবৈধ অবস্থানে থাকা বাংলাদেশিদের দ্রুত নির্ভরযোগ্য আইনি সহায়তা ও সচেতনতামূলক উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি।


মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগ তাদের অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন। বাংলাদেশিসহ অন্য দেশের অভিবাসীদের প্রতি আহ্বান, যারা বৈধতার বাইরে রয়েছেন, তারা যেন স্বেচ্ছায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রত্যাবাসন কর্মসূচিতে অংশ নেন। না হলে পরবর্তীতে আইনানুগ কঠোর শাস্তির মুখে পড়তে হতে পারে।