Home আন্তর্জাতিক শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে বৃহত্তম মাদক চালান জব্দ

শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে বৃহত্তম মাদক চালান জব্দ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

শ্রীলঙ্কা, ৩০ মে: শ্রীলঙ্কার কলম্বো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ২১ বছর বয়সী ব্রিটিশ নাগরিক ও দক্ষিণ লন্ডনের প্রাক্তন বিমান সেবিকা চার্লট মে লিকে বিপুল পরিমাণ ‘কুশ’ নামক নিষিদ্ধ সিন্থেটিক মাদকসহ আটক করা হয়েছে। চার্লটের লাগেজ থেকে জব্দ করা হয়েছে ৪৬ কেজি মাদক। আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ৩.৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে এটি সর্ববৃহৎ মাদক জব্দ বলে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

‘কুশ’ মাদকটি অত্যন্ত ভয়ংকর এবং মানুষের পচা হাড় থেকে তৈরি করা হয় বলে ধারণা করা হয়। এটি মূলত পশ্চিম আফ্রিকার মাদক ব্যবসায় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত একটি ড্রাগ। সিয়েরা লিওনে এই মাদকের কারণে প্রতি সপ্তাহে অন্তত ডজনখানেক মানুষের মৃত্যু ঘটে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, কবরস্থান পাহারা দিয়ে কঙ্কাল চুরি রোধ করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে যাতে মৃতদেহ থেকে হাড় সংগ্রহ করে ‘কুশ’ মাদক তৈরি করা না যায়। ২০২৪ সালে সিয়েরা লিওনের প্রেসিডেন্ট জুলিয়াস মাদা বায়ো এই ভয়ংকর মাদক নিয়ন্ত্রণে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন।

চার্লট মে লি, যিনি দক্ষিণ লন্ডনের বাসিন্দা এবং প্রাক্তন বিমান সেবিকা, তিনি আগে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে কর্মরত ছিলেন। তার ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর শ্রীলঙ্কায় প্রবেশ করেন। শ্রীলঙ্কার কাস্টমস ও পুলিশ জানায়, চার্লটকে এই মাসের শুরুতে বন্দরনায়েকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটক করা হয়। তার লাগেজে তল্লাশি চালিয়ে বিপুল পরিমাণ ‘কুশ’ মাদক উদ্ধার করা হয়। চার্লট নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলছেন, “আমি জানি না এই মাদক আমার ব্যাগে কীভাবে এল। সম্ভবত কেউ আমার অজান্তেই এগুলো রেখে গেছে। আমাকে মিথ্যা ফাঁসানো হচ্ছে।”

তবে শ্রীলঙ্কার আইন অনুযায়ী চার্লটের বিরুদ্ধে মাদক পাচারের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার সর্বোচ্চ ২৫ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। বর্তমানে তাকে রাজধানী কলম্বোর উত্তরে অবস্থিত নেগোম্বোর একটি কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। কারাগারের পরিবেশ কঠিন বলে জানা গেছে, যেখানে চার্লট কংক্রিটের মেঝেতে ঘুমাচ্ছেন। তার পরিবার ও আইনজীবীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করার খবর পাওয়া গেছে।

শ্রীলঙ্কার কাস্টমস কর্মকর্তা ও বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যাংকক থেকে শ্রীলঙ্কা হয়ে দক্ষিণ এশিয়ার এই অঞ্চলে মাদক পাচারের একটি নতুন করিডর গড়ে উঠেছে, যা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারির মধ্যে রয়েছে। এ ধরনের পাচার মোকাবেলায় কাস্টমস প্রোফাইলিং এবং গোয়েন্দা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করছে। কাস্টমসের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, “এই চালানটি শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মাদক জব্দ। এটি আমাদের কাছে একটি বড় সাফল্য, তবে একই সাথে আমাদের আরও সতর্ক থাকতে হবে।”

একই সময়ে ব্যাংকক থেকে যাত্রা করা আরেক ব্রিটিশ নারী বেলা কুলি (১৮) গাঁজা ও হাশিশসহ জর্জিয়ায় গ্রেপ্তার হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ২০ বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মামলা চলছে। এই তথ্য থেকে বোঝা যাচ্ছে, দক্ষিণ এশিয়া এবং আশেপাশের অঞ্চলে মাদক পাচারের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালানে নতুন নতুন পথ তৈরি হচ্ছে।

‘কুশ’ মাদক ব্যবহারের ফলে ব্যবহারকারীরা হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়েন, চলন্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়েন কিংবা দুর্ঘটনার শিকার হন। সিয়েরা লিওনে এই ভয়ংকর ড্রাগের কারণে প্রতি সপ্তাহে ডজনখানেক মানুষের মৃত্যু ঘটে, যা দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় সিয়েরা লিওনের সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে এবং জরুরি অবস্থা জারি করেছে।

এই ঘটনায় আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালানের নতুন মাত্রা সামনে এসেছে, যা দক্ষিণ এশিয়া ও পশ্চিম আফ্রিকার মধ্যে অবৈধ মাদক ব্যবসায় জটিলতা সৃষ্টি করছে। শ্রীলঙ্কা, যেহেতু দক্ষিণ এশিয়ার একটি প্রধান গেটওয়ে হিসেবে বিবেচিত, তাই এখানে মাদক পাচার রোধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও কাস্টমস বিভাগ এই ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে।

এই ঘটনা আন্তর্জাতিক মাদক নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, যারা ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে সহযোগিতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাদক পাচারের এই নতুন করিডর সম্পর্কে বিস্তারিত গোয়েন্দা তথ্য আদায় ও আন্তর্জাতিক সমন্বয় ছাড়া কার্যকরভাবে মোকাবেলা করা কঠিন হবে।