আন্তর্জাতিক ডেস্ক: দিল্লির বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাজধানীতে কৃত্রিম বৃষ্টি বা ক্লাউড সিডিংয়ের দুটি পরীক্ষা চালিয়েছে দিল্লি সরকার। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) কানপুর ও মেরঠ থেকে উড্ডয়ন করা দুটি বিমান মেঘে আর্দ্রতা সৃষ্টি করে বৃষ্টি ঘটানোর চেষ্টা করলেও সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো বৃষ্টিপাত হয়নি।
ভারতের কানপুরের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (আইআইটি)-এর পরিচালনায় পরীক্ষাগুলো অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক মানীন্দ্র আগরওয়াল জানান, “মঙ্গলবার দুপুর ও বিকেলে দুটি উড্ডয়ন করা হয়। বিমানে মোট ১৪টি ফ্লেয়ার নিক্ষেপ করা হয়েছিল। তবে সেগুলো থেকে বৃষ্টি হয়নি, তাই পরীক্ষা পুরোপুরি সফল বলা যাচ্ছে না।”
কানপুর ও মেরঠ থেকে উড্ডয়ন করা বিমানগুলো সেসনা মডেলের, যাতে লবণভিত্তিক ও সিলভার আয়োডাইডের ফ্লেয়ার স্থাপন করা হয়েছিল। এর মাধ্যমে মেঘে আর্দ্রতা বাড়িয়ে কৃত্রিম বৃষ্টি ঘটানোর পরিকল্পনা ছিল। এর আগেও দিল্লির বুরারির আকাশে একই ধরনের একটি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছিল।
দিল্লির মন্ত্রী মনজিন্দর সিং সিরসা জানিয়েছেন, মঙ্গলবারের দুটি পরীক্ষা ছিল রাজধানীতে এ ধরনের তৃতীয় প্রচেষ্টা। প্রথম বিমানটি সকালে কানপুর থেকে এবং দ্বিতীয়টি বিকেলে মেরঠ থেকে উড্ডয়ন করে। “আজকের পরীক্ষায় বাইরের দিল্লি অঞ্চলগুলো যেমন খেখরা, বুরারি, উত্তর করোল বাগ ও মায়ূর বিহার অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রতিটি ফ্লেয়ারের ওজন ছিল দুই থেকে আড়াই কিলোগ্রামের মধ্যে,” তিনি জানান।
তবে ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তরের (IMD) তথ্যমতে, মঙ্গলবার দিল্লির আকাশে মেঘ থাকলেও আর্দ্রতার মাত্রা ছিল মাত্র ১০ থেকে ১৫ শতাংশ, যা ক্লাউড সিডিংয়ের জন্য যথেষ্ট নয়। অধ্যাপক আগরওয়ালও একই মত প্রকাশ করেন—“আজকের মেঘে আর্দ্রতা ছিল মাত্র ১৫-২০ শতাংশ। এত কম আর্দ্রতায় বৃষ্টি সৃষ্টি করা সম্ভব হয়নি।”
তবে সরকার দাবি করেছে, পরীক্ষাগুলো সম্পূর্ণ ব্যর্থ নয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রকাশিত দিল্লি সরকারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্লাউড সিডিংয়ের পর লক্ষ্য করা অঞ্চলে বায়ুদূষণের মাত্রা কিছুটা কমেছে। বিশেষ করে, মায়ূর বিহার, করোল বাগ ও বুরারিতে বায়ুবাহিত কণার (PM2.5 এবং PM10) মাত্রা কমে এসেছে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পরীক্ষার আগে PM2.5 ছিল যথাক্রমে ২২১, ২৩0 ও ২২৯, যা পরীক্ষার পর নেমে আসে ২০৭, ২০৬ ও ২০৩-এ। একইভাবে, PM10 ছিল ২০৭, ২০৬ ও ২০৯, যা কমে দাঁড়ায় ১৭৭, ১৬৩ ও ১৭৭-এ। এছাড়া, নয়ডা ও গ্রেটার নয়ডায় বিকেল ৪টার দিকে সামান্য বৃষ্টিপাত (০.১ ও ০.২ মিলিমিটার) রেকর্ড করা হয়।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, বুধবার (২৯ অক্টোবর) আরও একটি পরীক্ষা চালানো হতে পারে। অধ্যাপক আগরওয়াল বলেন, “আজকের পরীক্ষায় আমরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি, যা আগামী ট্রায়ালগুলোকে আরও কার্যকর করতে সহায়তা করবে। আমরা আগামীকাল আবার চেষ্টা করব।”
ক্লাউড সিডিং প্রযুক্তি সাধারণত বায়ুদূষণ কমানো ও খরার সময় কৃত্রিম বৃষ্টি ঘটানোর উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়। দিল্লির মতো ঘনবসতিপূর্ণ শহরে এটি পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগের মাধ্যমে সরকার আশা করছে, ধুলাবালি ও ক্ষুদ্র কণার ঘনত্ব নিয়ন্ত্রণে নতুন পথ খুঁজে পাওয়া যাবে।
 
            









