কৃষিভিত্তিক শিল্প সম্ভাবনা
নয়ন দাস, কুড়িগ্রাম: ধান বাংলাদেশের প্রধান খাদ্যশস্য এবং জাতীয় অর্থনীতির সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে। দেশের মোট কৃষিজ উৎপাদনের প্রায় ৭০ শতাংশই ধানভিত্তিক। কৃষি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ধানকে শুধু খাদ্যশস্য হিসেবে না দেখে শিল্পভিত্তিকভাবে ব্যবহার করলে বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাবে।
উৎপাদন ও চাহিদার চিত্র
কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে বছরে প্রায় সাড়ে তিন কোটি মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়। অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে প্রচুর ধান ও চাল উদ্বৃত্ত থাকে। তবে আধুনিক প্রযুক্তি ও প্রক্রিয়াজাত শিল্পের অভাবে এই উদ্বৃত্ত ধান থেকে অর্থনৈতিক মূল্য বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না।
শিল্প সম্ভাবনা
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ধান থেকে চাল ছাড়াও নানা ধরনের পণ্য তৈরি করা যায়—
চালের গুঁড়া ও চালের আটা: বেকারি ও কনফেকশনারি শিল্পে ব্যবহৃত হয়।
চালের ভূষি: ভোজ্য তেল উৎপাদন ও পশুখাদ্যের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
চালের খুদ ও ভাঙা চাল: নুডলস, স্ন্যাকস ও বিস্কুট শিল্পে কাঁচামাল।
ভ্যালু অ্যাডেড চালজাত পণ্য: রাইস ক্র্যাকার, রাইস মিল্ক, ইনস্ট্যান্ট ফুড।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের এক গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, চালভিত্তিক ভ্যালু অ্যাডেড পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি করলে বছরে অন্তত ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব।
কৃষকের লাভজনকতা
ধানভিত্তিক শিল্প গড়ে উঠলে কৃষকেরা শুধু ধান বিক্রি করেই নয়, চাল প্রক্রিয়াজাত শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হয়ে অতিরিক্ত আয় করতে পারবেন। বর্তমানে ধান বিক্রির দাম বাজারে ওঠানামা করলেও প্রক্রিয়াজাত শিল্প থাকলে কৃষকেরা স্থিতিশীল বাজার পাবেন।
চ্যালেঞ্জ ও করণীয়
- আধুনিক রাইস প্রসেসিং মিলের অভাব
- আন্তর্জাতিক মানের প্যাকেজিং ও ব্র্যান্ডিং ঘাটতি
- রপ্তানি নীতিতে জটিলতা
- গবেষণা ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগের ঘাটতি
সরকার ইতোমধ্যেই চাল রপ্তানিতে উৎসাহ দিতে এবং আধুনিক প্রসেসিং মিল স্থাপনে স্বল্পসুদে ঋণ সুবিধা ঘোষণা করেছে। উদ্যোক্তাদের মতে, “যদি নীতিগত সহায়তা জোরদার করা যায়, তবে চালভিত্তিক শিল্প তৈরি পোশাকের পর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি খাত হয়ে উঠতে পারে।”