Home Second Lead নেপাল থেকে বাংলাদেশের প্রতিধ্বনি: দুই প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের অভিন্ন দৃশ্যপট

নেপাল থেকে বাংলাদেশের প্রতিধ্বনি: দুই প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের অভিন্ন দৃশ্যপট

রামেশ ভট্টরায়, কাঠমান্ডু: প্রবল জনরোষ, দুর্নীতির অভিযোগ এবং রাস্তায় নামা তরুণ প্রজন্ম—চিত্রটা যেন অভিন্ন। নেপালে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি ও রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পৌডেলের পদত্যাগের ঘটনাকে ঘিরে যেভাবে পরিস্থিতি রূপ নিল, তা বাংলাদেশে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের স্মৃতি নতুন করে জাগিয়ে তুলেছে।

বাংলাদেশে সেদিন কয়েক মাসের টানা আন্দোলন, বিরোধীদের অব্যাহত চাপ এবং সবচেয়ে বড়ো—তরুণদের নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তৎকালীন পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হয়ে তিনি হেলিকপ্টারে চেপে দেশত্যাগ করেন বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। সেই ঘটনায়ও দেখা গিয়েছিল এক অভূতপূর্ব ক্ষমতার শূন্যতা, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং আন্দোলনের পরবর্তী দিকনির্দেশনা নিয়ে প্রশ্ন।

একই দৃশ্য যেন এবার নেপালে। সোমবার সোশ্যাল মিডিয়ায় নিষেধাজ্ঞা জারির পরই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে নেপালের তরুণ প্রজন্ম। বিক্ষোভ বাড়তে বাড়তে তা সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতিবিরোধী গণআন্দোলনে রূপ নেয়। মঙ্গলবার চাপে পড়ে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি পদত্যাগ করেন, কিছুক্ষণের মধ্যেই রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পৌডেলও সরে দাঁড়ান। এরপরই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয় সেনা কপ্টারে চেপে ওলির দেশত্যাগের ভিডিও। গন্তব্য হতে পারে দুবাই—এমন খবর ছড়িয়ে পড়লেও তা এখনো নিশ্চিত নয়।

অভিন্ন বৈশিষ্ট্য

তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্ব: বাংলাদেশে যেমন শিক্ষার্থীরা ‘নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতির’ ডাক দিয়েছিল, নেপালেও সোশ্যাল মিডিয়া প্রজন্ম রাজপথে নেমেছে।

দুর্নীতি ও স্বৈরতন্ত্রবিরোধী স্লোগান: দুই দেশেই আন্দোলনের মূল সুর ছিল স্বচ্ছ শাসনব্যবস্থা ও দায়বদ্ধতার দাবি।

দেশত্যাগের দৃশ্য: শেখ হাসিনার মতোই কেপি ওলিকেও হেলিকপ্টারে অজ্ঞাত গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে।

ক্ষমতার শূন্যতা: উভয় ক্ষেত্রেই প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের পর রাষ্ট্রপতির ভূমিকাও প্রশ্নের মুখে পড়ে।

পার্থক্য কোথায়?

বাংলাদেশে দীর্ঘদিনের একদলীয় শাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ছিল সুস্পষ্ট; নেপালে তা হঠাৎ সিদ্ধান্ত—সোশ্যাল মিডিয়া নিষেধাজ্ঞা—থেকে জ্বলে ওঠে। তবুও দুই ক্ষেত্রেই জনগণের চাপই শেষ পর্যন্ত নির্ধারক হয়ে উঠেছে।

ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা

বাংলাদেশে হাসিনার বিদায়ের পর অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে রাজনৈতিক পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। নেপালে এখনো সেই রূপরেখা পরিষ্কার নয়। সেনার প্রভাব, রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান এবং আন্দোলনরত তরুণদের দাবি—সব মিলিয়ে দেশটি একটি অচেনা ও অস্থির অধ্যায়ে প্রবেশ করছে।