Home কৃষি কোরবানির হাটে দুর্যোগের ছায়া: বেচাকেনা থমকে, বিপাকে বেপারি-ক্রেতা

কোরবানির হাটে দুর্যোগের ছায়া: বেচাকেনা থমকে, বিপাকে বেপারি-ক্রেতা

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: টানা বৃষ্টিতে থমকে গেছে কোরবানির হাটের জমজমাট পরিবেশ। আগেভাগে পশু কিনে রাখার সংকটে শহুরে ক্রেতা, মাথায় হাত বেপারিদেরও। সরকারি ছুটির পর বিক্রির আশায় অপেক্ষায় হাটগুলো।

ঘনঘন বৃষ্টি, তীব্র গরম আর কাদায় ভরা মাঠসব মিলিয়ে কোরবানির পশুর হাটগুলোতে এবার যেন শুরুতেই বিপদের ঘনঘটা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পশু নিয়ে আসা হাজারো বেপারি এখন চরম অনিশ্চয়তায়। হাটে আগত ক্রেতারাও সংকটে পড়েছেন আগেভাগে পশু কিনে রাখলেও কোথায় রাখবেন, কীভাবে দেখভাল করবেন, তা নিয়ে দ্বিধায় তারা।

ঢাকার গাবতলী, উত্তরার টঙ্গী হাট, চট্টগ্রামের সাগরিকা হাট কিংবা রাজশাহীর কোর্ট স্টেশন সংলগ্ন হাট সব জায়গাতেই একই চিত্র। পশু আছে, বিক্রি কম। কোথাও হাটের মাঠ জলমগ্ন, কোথাও আবার তীব্র গরমে অসুস্থ হচ্ছে গরু-ছাগল। এর মধ্যে ঘনঘন কালবৈশাখী ও বজ্রসহ বৃষ্টিতে পশু সামলানোয় হিমশিম খাচ্ছেন বেপারিরা।

গাবতলী হাটে নওগাঁ থেকে গরু এনে বসেছেন মো. বুলু মিয়া। বললেন, “এই গরুগুলা আনতে দশ দিন খরচ হইছে। গতকাল গাবতলীতে উঠছি, কিন্তু এখনো একটা বিক্রি হয় নাই। বৃষ্টি হইলে তো ক্রেতা আসে না, আর যারা আসে, তারাও বলে গরু কিনে এত আগে রাখবে কোথায়!”

একই অভিযোগ কুষ্টিয়া থেকে আসা আবদুল মান্নানের। তিনি বলেন, “পাঁচটা গরু এনেছি, দুই দিন হাটে বসে বসে ঘরছাড়া। এমন বৃষ্টিতে খাওয়ানোই কঠিন, আবার বিক্রির আশা তো ক্ষীণ। সরকারী বন্ধ শুরু না হইলে কিছু হইবো না।”

শহরের ভেতর বাস করা মধ্যবিত্ত ক্রেতারাও পড়েছেন বড় সমস্যায়। আগেভাগে একটু কম দামে গরু কিনে নিলে ভালো হতো, কিন্তু বাসায় জায়গার অভাব, তদারকির লোক নেই, নিরাপত্তার ঝুঁকি সব মিলিয়ে তাঁরা এখনো হাটে যাচ্ছেন দোদুল্যমান মন নিয়ে। গুলশানের বাসিন্দা মেহেদী হাসান বললেন, “এখন কিনলে কোথায় রাখি? বাসায় গরু রাখার ব্যবস্থা নেই, আবার খামার থেকে কিনে রাখলেও খাবার-দেখাশোনার দায়িত্ব কে নেবে?”

হাট কমিটির একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, প্রকৃতিগত দুর্যোগের কারণে এবারের মৌসুমটা শুরু থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চট্টগ্রামের সাগরিকা হাটের এক কর্মকর্তার ভাষ্য, “হাটে পশু এসেছে প্রচুর, কিন্তু ক্রেতা কম। আমরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার চেষ্টা করছি, কিন্তু কাদার কারণে হাটে হাঁটাচলাই কঠিন।”

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, এবার সারাদেশে পর্যাপ্ত গবাদি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত হয়েছে। কিন্তু হাটে আগেভাগে ক্রেতা না আসায় বিক্রির গতি মন্থর।

তবে, বেপারিদের আশা, সরকারি ছুটি শুরু হলে হাটে লোক সমাগম বাড়বে, তখন কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যাবে। যদিও আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, আগামী কয়েকদিনে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আরও বৃষ্টি হতে পারে।

সব মিলিয়ে এবারের কোরবানির হাট নিয়ে আশঙ্কা যেমন আছে, তেমনি আছে খানিকটা আশা, শেষ সময়ে যদি প্রকৃতি সহায় হয়, শহরের ক্রেতারা হাটমুখী হন, তাহলে হয়তো ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেওয়া যাবে।