বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: অনেকেই ভোরবেলা দুধওয়ালার সাইকেলের ঘণ্টি শুনে দরজা খুলে দাঁড়ান, কারণ তিনি আনছেন ‘খাঁটি গরুর দুধ’। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই দুধ কি সত্যিই খাঁটি? না কি আমরা প্রতিদিন এক ধরনের প্রতারণার শিকার হচ্ছি?
রাসায়নিক মিশ্রণ: সাধারণ চিত্র
ঢাকা ও আশপাশের অনেক এলাকায় বিক্রি হওয়া তথাকথিত খাঁটি দুধে পানির পরিমাণ বেশি থাকাটা এখন অলিখিত নিয়ম। শুধু পানি নয়, দুধ ঘন করতে ডিটারজেন্ট, স্টার্চ, ফরমালিন, এমনকি সোডিয়াম সালফেট মেশানোর প্রমাণ মিলেছে একাধিক পরীক্ষাগারে। ফার্মেসিতে বিক্রি হওয়া অক্সিটোসিন ইনজেকশন গরুকে প্রয়োগ করে দুধ উৎপাদন বাড়ানো হয়—যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
উৎস নিয়ে বিভ্রান্তি
দুধ বিক্রেতাদের অনেকেই দাবি করেন, তাঁদের গরু নিজের বা পরিচিত কারও খামারে লালিত। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, শহরের মোড়ঘেঁষা এই গোয়ালাদের বেশিরভাগই দুধ সংগ্রহ করেন বিভিন্ন ভ্রাম্যমাণ দুধ কালেক্টরদের কাছ থেকে। এসব কালেক্টর ৮-১০টি উৎস থেকে দুধ মিশিয়ে সস্তায় বিক্রি করেন। এতে কোন দুধ কোন গাভীর, তা জানার সুযোগই থাকে না।
রাস্তা থেকে গ্লাসে: এক বিপজ্জনক যাত্রা
সঠিক শীতলীকরণ ছাড়া দুধের পুষ্টিগুণ দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু গরমের মধ্যে খোলা সাইকেল বা ভ্যানগাড়িতে বালতিভর্তি দুধ শহরে প্রবেশ করে। তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ না থাকায় ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বেড়ে যায়, যা দুধকে বিষে পরিণত করতে পারে।
প্রতারক গোয়ালাদের নতুন কৌশল
- কিছু বিক্রেতা দুধের গায়ে কৃত্রিমভাবে ঝাঁঝালো গন্ধ দিয়ে খাঁটি মনে করান।
- ‘ফেনা ওঠে’ এমন দুধকে খাঁটি বলার প্রচলনও এখনকার প্রতারণার অংশ, যা আসলে ডিটারজেন্টের কাজ।
- অনেকে ‘প্রসবকালীন গাভীর দুধ’ দিয়ে থাকেন, যা খেতে অনুপযুক্ত।
ভোক্তার করণীয়
- দুধ ঘন কিনা বোঝার জন্য বাসায় এক ফোঁটা দুধে আয়োডিন মিশিয়ে দেখুন—রং নীলচে হলে বোঝা যাবে স্টার্চ রয়েছে।
- সম্ভব হলে প্যাকেটজাত পাস্তুরিত দুধ ব্যবহার করা উচিত।
- গোয়ালার কাছ থেকে কিনলে তার খামার দেখতে চাওয়া বা লাইভ ভিডিও চাওয়া আপনার অধিকার।
- শিশুদের জন্য গুঁড়ো দুধই অধিক নিরাপদ, যদি না আপনি একেবারে নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে কাঁচা দুধ পান।
বিকল্প ভাবনা
বর্তমানে ফার্ম-টু-হোম কনসেপ্ট জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। অনলাইনভিত্তিক কিছু প্রতিষ্ঠান দুধ সংগ্রহ, পরীক্ষা ও সংরক্ষণ করে বাসায় পৌঁছে দেয়। যদিও দাম একটু বেশি, তবে স্বাস্থ্যঝুঁকি তুলনায় কম।
খাঁটি দুধের নামে আজ যা বিক্রি হচ্ছে, তা অনেক সময় শরীরের জন্য অপকারি এক ককটেল। শুধু স্বাদ নয়, স্বাস্থ্যও যখন প্রশ্নে পড়ে, তখন খাঁটি শব্দটা খাঁটি কিনা—তা বারবার ভাবতে হয়।